শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রচ্ছদসাহিত্য ও সংস্কৃতিবাংলার ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উপন্যাস লেখা অপূর্ন ই থেকে গেল...

বাংলার ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উপন্যাস লেখা অপূর্ন ই থেকে গেল কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের।।

“১৯৪৭ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বড় আকারের উপন্যাস লেখা অপূর্ন ই থেকে গেল দুই বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের। 

বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় “উত্তরাধিকার’, ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’, ‘গর্ভধারিণী’ উপন্যাসের রচয়িতা বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার গত ৮ই মে সোমবার সন্ধ্যায় ৭৯ বছর বয়সে মারা যান।

বেশ কয় বছর আগে দৈনিক প্রথম আলোর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের জন্মের উৎসের রাজনৈতিক পটভূমি নিয়ে লেখা আগ্রহর কথা জানিয়েছেন। সেই সাথে তিনি তার সংশয়ের কথা এভাবে বলেছিলেন যে,” লিখতে বেশ ভয় লাগে। আমি যে বয়সে এসে পৌঁছেছি, সেখানে এসে এত বড় উপন্যাস লিখে শেষ করতে পারব কি না, সেই ভয় থেকেই যায়”।

বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার তার লেখার আগ্রহের কথা জানাতে গিয়ে বলেন, “১৯৪৭ ভারতবর্ষ দ্বিখণ্ডিত হওয়া থেকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম—এই বিশাল সময়ে যে মানুষগুলো উপমহাদেশের ভাঙা-গড়ার সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন, তাঁদের নিয়ে কোনো পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস লেখা হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

তখনকার মুসলিম লীগের সঙ্গে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষদের মানসিকতা সেভাবে মিলত না। এ দেশের লোকেরা ছিল শ্যামলা বর্ণের। সেখানে মুসলিম লীগের অধিকাংশ নেতা ছিলেন উজ্জ্বল বর্ণের মানুষ। তাঁরা অধিকাংশ এসেছিলেন উপকূল অঞ্চল থেকে।

মুসলিম লীগের পতনের সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু জনগণ তাঁদের পাশ থেকে সরে দাঁড়ায়। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর কথাতেই যেন বুকে সাহস ফিরে পেল গোটা বাঙালি জাতি। এসব ইতিহাস আমি উপন্যাস আকারে তিন খণ্ডে লিখব ভেবেছিলাম। প্রথম খণ্ড হবে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে ১৯৫২–এর ভাষা আন্দোলন, দ্বিতীয় খণ্ডে ’৫২ থেকে ’৫৮ সালের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ আর শেষ খণ্ড হবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। এটা লেখার খুব স্বপ্ন আছে আমার।” এভাবে বাংলাদেশের জন্মের পটভূমি নিয়ে তার লেখার আগ্রহের কথা বলেছিলেন কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে দেশ পত্রিকায় ‘দৌড়’ প্রকাশিত হওয়ার পর ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’, ‘উত্তরাধিকার’ লিখেন সমরেশ মজুমদার। এ ছাড়া ‘সাতকাহন’, ‘গর্ভধারিণী’, ‘অর্জুন’, ‘মেজরের অ্যাডভেঞ্চার’সহ অনেক পাঠকপ্রিয় উপন্যাস লিখেছেন তিনি, পেয়েছেন অনেক সম্মাননা। চিত্রনাট্যকার হিসেবে বিএফজেএ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির পদকও রয়েছে তাঁর।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৮ সালে সমরেশ মজুমদারকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান প্রদান করে। এছাড়া তিনি সাহিত্য আকাদেমি অ্যাওয়ার্ড, আনন্দ পুরস্কার, বিএফজেএ পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।

সমরেশ মজুমদারের জন্ম ১৯৪৪ সালের ১০ মার্চ, জলপাইগুড়ির চা বাগান ঘেরা ডুয়ার্সে। তাঁর স্কুলজীবন কেটেছে জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। পরে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন।###

 

আরও পড়ুন

জন্মদিনে প্রিয়জনের জলছবি

- Advertisment -spot_img

সর্বশেষ