ফ্রান্স এবং স্পেন, ফুটবলের দুই স্বর্গরাজ্যে ফুটবল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ভিন্ন কারণে। বিশ্বে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই ফুটবলার লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে আলোচনা এখনও তুঙ্গে। একজনের বিদায়, অন্যজনও যাওয়ার অপেক্ষায়। অন্যদিকে ফুটবলে বর্ণবাদ মোকাবেলা স্পেনকে ইতিহাসে মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসভিত্তিক পেশাদার ফুটবল ক্লাব সংক্ষেপে “পিএসজি”। পুরো নাম ‘পারি সাঁ-জেরমাঁ’ ফুটবল ক্লাব।
“পিএসজিতে দুই বছর ভালো ছিলাম না” মন্তব্য করার মাধ্যমে বর্তমান বিশ্বের সেরা ফুটবলার মেসি জানিয়েছেন তিনি দুই বছর পিএসজিতে কাটানের পর সম্প্রতি কেন ইন্টার মায়ামিতে যোগ দিচ্ছেন।
পিএসজি ছাড়ার আগে মেসি নাকি এমবাপ্পেকে বার্সেলোনা কিংবা রিয়ালে মাদ্রিদে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মেসির মুল কথা ছিল “পিএসজি ছাড়ো, এরপর যেখানে খুশি যাও!”
পিএসজিতে দুই মৌসুম মেসির সাথে জুটি বেঁধে খেলা সতীর্থ এমবাপ্পেও স্বীকার করে বলেছেন, পিএসজিতে মেসি তার প্রাপ্য সম্মান পাননি। মেসি পিএসজি ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পরই এমবাপ্পের ক্লাব ছাড়ার প্রসঙ্গটি সামনে আসে। ক্লাবের উদ্দেশে পাঠানো এক চিঠিতে এমবাপ্পে জানান, ২০২৪ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি আর পিএসজির সাথে চুক্তি নবায়ন করবেন না। এছাড়া, এমবাপ্পের মা ফাইজা লামারিও চান তাঁর ছেলে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যাক। বর্তমানে এমবাপ্পের হয়ে তার মা ক্লাবের সঙ্গে দর-কষাকষির কাজ করছেন।
আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি মেসি নীরবে ফ্রান্স ছাড়ার পর ফ্রান্স ফরোয়ার্ড এমবাপ্পের পিএসজি ছাড়ার ঘোষণায় ফ্রান্সের ক্লাবটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন।
অন্যদিক ফুটবলে বর্ণবাদ মোকাবেলায় স্পেনকে ইতিহাসের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গত ২১ মে ভ্যালেন্সিয়ার বিরুদ্ধে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে স্পেনের লা লিগার খেলার সময় ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়াস জুনিয়র বর্ণবাদী নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে। গ্যালারি থেকে তাকে “বানর” বলে সম্বোধন করা হয়।
ঘটনাটি ব্রাজিল সহ সারা বিশ্বে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ফুটবল সংস্থাগুলিকে “ব্যবস্থা নিতে বলেছে যাতে, বর্ণবাদ এবং ফ্যাসিবাদ জায়গা করে নিতে না পারে।
ফিফাও প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফ্যান্টিনো ঘটনার পরপরই “ভিনিসিয়াসের প্রতি পূর্ণ সংহতি” প্রকাশ করেন।গত সপ্তাহে ফুটবল গভর্নিং বডি ঘোষণা করেছে যে খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত একটি বিশেষ বর্ণবাদ বিরোধী কমিটিতে ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে এর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে।
ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়ের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরালো হলেও, স্পেনে প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র, অস্পষ্ট এবং গুরুতর পদক্ষেপের অভাব ছিল যেন মনে হয়, লা লিগায় বর্ণবাদ খুবই স্বাভাবিক বিষয়।
ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়ের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন দেখানোর পরিবর্তে, অভিজাত স্প্যানিশ ফুটবল লিগ লা লিগার অবস্থান ছিল ঠিক উল্টো। এর সভাপতি, জাভিয়ের তেবাস, তার টুইটের ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে আক্রমণ করে বলেছেন: ‘বর্ণবাদের ক্ষেত্রে লা লিগার কি বা করার আছে?
২১ মের ঘটনার আগে, রিয়াল মাদ্রিদ বর্ণবাদের জন্য দুই মৌসুমে নয়টি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছিল বিশেষভাবে ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে লক্ষ্য করে। বর্ণবাদী নির্যাতনের স্পষ্টভাবে পদ্ধতিগত প্রকৃতি থাকা সত্ত্বেও, স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগগুলির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
স্প্যানিশ ফুটবল বর্ণবাদী ঘটনার দায়িত্ব এড়ানোর পাশাপাশি, উস্কানি দিচ্ছে। লা লিগার টিভি ধারাভাষ্যকার টনি প্যাডিলা, ভ্যালেন্সিয়া ও রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচটি সম্প্রচার কালে দর্শকদের বলেছিলেন : “আমাদের সর্বদা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো উচিত কিন্তু আমাদের এটাও বলা উচিত যে, ভিনি জুনিয়র একজন দেবদূত নন, তিনি নিখুঁত নন। মাঝে মাঝে সে অন্য দলকে উস্কে দেয়।
ফুটবলে বর্ণবাদ মোকাবেলায় স্পেন কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে উস্কানি দেওয়ার ঘটনায় ফুটবল অনুরাগী সহ বিশ্ববাসী হতাশ হয়েছে।###