শতকরা ৯৫ জন অধিবাসী ব্যবসায়িকভাবে সফল হওয়ায় কারণে বাংলাদেশিরা মৃত্যুর ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বৈধ-অবৈধভাবে আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছে। গত ৮ বছরের ৬শ জন বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হয়েছে। তার মধ্যে গত সোমবার ফ্রি স্টেট প্রদেশে সন্ত্রাসীদের গুলিতে রিগান ইসলাম নামে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। সুত্র বিবিসি।
সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার বোতশাবেলোতে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে রিগান ইসলাম (৩৫) সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছে। নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের শ্রীনদ্দি গ্রামের তাজু মিয়ার ছেলে রিগান গত ১৪ বছর ধরে সেখানে অবস্থান করে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রিগানের পরিবার তাঁর লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছে।
বাংলাদেশি অধিবাসীরা জানান,” দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি মাঝারি মানের ডিপার্টমেন্ট স্টোর থেকে প্রতিমাসে বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। “এখানে বাংলাদেশিদের আসার একটাই কারণ, আর সেটা হচ্ছে বিজনেস। সবাই বিজনেস করে সাকসেস হচ্ছে । শতকরা ৯৫ জনই ব্যবসায়িক ভাবে সফল হয়েছে। প্রথমে এসে অভিবাসীরা বাংলাদেশি মালিকানাধীন দোকানে চাকরি করে। এরপর তারা নিজেই আস্তে আস্তে ব্যবসা দাঁড় করায়।
এখানে মুদির দোকান, ডিপার্টমেন্ট স্টোর, মোবাইল টেলিফোন, ইলেকট্রনিকস এবং টেকনোলজি একসেসরিজ-সহ নানা ধরণের পণ্যের দোকান সাজিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দক্ষিণ আফ্রিকায় বড় শহরগুলো যেমন জোহানেসবার্গ, কেপটাউন কিংবা ব্লুমফন্টেইন বাংলাদেশিদের বেশিভাগই অর্থ উপার্জনস্থান হিসেবে বেচে নেন।
২০২১-২২ অর্থবছরে যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে, সেই তালিকায় দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান ছিল ১২তম।রেমিট্যান্সএর পরিমাণ ছিল ৩১৪ মিলিয়ন বা ৩১ কোটি ৪০ লক্ষ মার্কিন ডলার। তবে ব্যাংকিং চ্যানেলে যত রেমিটেন্স বাংলাদেশে আসে, তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে আসে বলে প্রবাসীদের অভিমত।
অর্থ উপার্জন ও ব্যবসায়িকভাবে প্রতিষ্ঠিত পাওয়ার কারণে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা এখন জনপ্রিয় একটি গন্তব্য হয়ে উঠেছে ।
নব্বই-এর দশক থেকে কাজের সন্ধানে যাত্রা শুরু হলেও গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশিদের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় গন্তব্য। এই দেশে আনুমানিক আড়াই থেকে তিন লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশি থাাকলে ও সরকারি হিসাবে বৈধভাবে রয়েছে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি।
আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ হওয়া কারণে সারা বিশ্ব থেকে কাজের সন্ধানে অনেকেই দক্ষিণ আফ্রিকায় যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় জনগণের মধ্য প্রায় ৩০ শতাংশ এখনও বেকার সেজন্য দেশটিতে অভিবাসী বিরোধী মনোভাবের কারণে সহিংসতা ঘটছে। তাছাড়া ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং ব্যক্তিগত ও নারীঘটিত শত্রুতা কারণে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয় প্রবাসীরা মনে করেন। দেশটিতে বাংলাদেশি মালিকানাধীন দোকানপাটে হামলা এবং লুটপাটে এখন প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে।
২০১৫ সাল থেকে প্রায় ছয়শো’র মতো প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক সেখানে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে অবৈধভাবে বাসবাস করা বাংলাদেশিরা হামলা বা হুমকির শিকার হলেও অনেকেই দূতাবাস বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানাতে যায় না।
সন্ত্রাসী ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাস করা অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি এখন ওই দেশ ছেড়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে প্রবাসীরা জানায়।#