মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ বিদেশী ছাত্র পড়াশোনা করছে। শিক্ষা খরচ বাবদ প্রায় ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের মাধ্যমে বিদেশি ছাত্ররা মার্কিন অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে । বিদেশী ছাত্রের মধ্যে চীনের অবস্থান শীর্ষে, এরপর ভারতের অবস্থান, এদের তুলনায় বাংলাদেশী ছাত্রের অবস্থান খুবই কম।
ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন ইনস্টিটিউট (আইআইই) এক প্রতিবেদন জানায়, আমেরিকার ২শটির বেশী স্থানে ৬৩০টি মার্কিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৯লাখ ৪৮হাজার৫১৯জন বিদেশি শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত আন্তর্জাতিক ছাত্রদের বেশিরভাগই মূলত চীন এবং ভারত থেকে আসা। তারা মোট বিদেশি ছাত্রের ৫২শতাংশ। এর মধ্য চীনের ২,৯০,০৮৬ জন শিক্ষার্থী এবং ভারতের ১,৯৯,১৮২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার ৪০,৭৫৫ জন, কানাডার ২৭,০১৩ জন, ভিয়েতনামের ২০,৭১৪ জন, তাইওয়ানের ২০,৪৮৭ জন, সৌদি আরবের ১৮,২০৬ জন ব্রাজিলের ১৪,৮৯৭ জন, মেক্সিকোর ১৪,৫০০ জন, নাইজেরিয়ার ১৪,৪৩৮জন, জাপানের ১৩,৪৪৭জন নেপালের ১১,৭৭৯ জন এবং বাংলাদেশের ১০,৫৯৭ শিক্ষার্থী আমেরিকায় অধ্যায়ন করছে।
ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এর তথ্যে, গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা তিন গুণের বেশি বেড়েছে। ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ৩ হাজার ৩১৪ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে এসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজার ৫৯৭ দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ১৯৭৪-৭৫ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৮০।
এদিকে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্স মতে, কোভিডের কারনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের অর্থনৈতিক অবদান ২০১৯/২০সালে ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২১/২২ সালে ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এ নেমে এসেছিল। বর্তমানে তা আবার ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পৌঁছেছে। বিদেশী ছাত্রদের প্রায় ৬২ শতাংশ তাদের তহবিলের বেশিরভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের ব্যক্তিগত, পারিবারিক উৎসের পাশাপাশি তাদের দেশের সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ে থাকে। সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়ন করে তারা আমেরিকার বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত গবেষণায় অবদান রাখে এবং মার্কিন শ্রেণীকক্ষে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসে, আমেরিকান আন্ডারগ্রাজুয়েটদের বিশ্বব্যাপী ক্যারিয়ারের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের মতে আমেরিকায় বিদেশী ছাত্ররা শুধু ২০১৮ সালেই মার্কিন অর্থনীতিতে ৪৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রেখেছে। তবে বিদেশী ছাত্ররা পড়তে গিয়ে গড়ে ২৪,৯১৪ মার্কিন ডলার ফি প্রদান করলেও আমেরিকান ছাত্ররা গড়ে ১৪,৯০০মার্কিন ডলার ফি প্রদান করে। এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী ছাত্ররা প্রায়ই স্থানীয় ছাত্রদের তুলনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশি অর্থ প্রদান করে। বছরে এর পরিমাণ প্রায় ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ফরেন স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজারের মতে, আন্তর্জাতিক ছাত্ররা মার্কিন অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতে সরকারী ও বেসরকারী গবেষণা উদ্যোগকে উন্নত করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিযোগিতায় সাহায্য করে এমন চাকরি তৈরি করে।
বিদেশী ছাত্ররা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন তাদের আবাসন, পরিবহন, ডাইনিং এবং ভোগ্যপণ্যের খরচের মাধ্যমে মার্কিন অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রেখেছে। এই অতিরিক্ত অর্থনৈতিক কার্যক্রমে জাতীয় অর্থনীতির পাশাপাশি স্থানীয় উভয়ের জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ।
এআইআরসি মতে,২০২৫ সালের মধ্যে, আমেরিকা একজন আন্তর্জাতিক ছাত্র দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ৩শ বিলিয়ন-ডলার কোম্পানির আবাসস্থল হতে পারে । তবে, বর্তমানে মার্কিন অভিবাসন আইনের অধীনে বিদেশী নাগরিকদের ব্যবসা শুরু করার এবং একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর দেশে থাকার কোনো নির্ভরযোগ্য উপায় নেই। আমেরিকায় সফল অভিবাসী উদ্যোক্তারা প্রায় সবসময়ই উদ্বাস্তু বা পরিবার-স্পন্সর এবং নিয়োগকর্তা-স্পন্সর অভিবাসী।
স্নাতক শেষ করার পরে আরও বেশি ছাত্রদের থাকার এবং ব্যবসায় বৃদ্ধির দরজা খুলে দিতে হবে। আন্তর্জাতিক ছাত্রদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার এবং কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা কমাতে প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের সরকারী প্রতিনিধিদের লবিং করা উচিত, কারণ অর্থনৈতিক সুবিধাগুলি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গুলো নিচ্ছে বলে এআইআরসি মনে করে ৷
২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ১১শত টিরও বেশি বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। এই বৃত্তিগুলি টিউশন ফি, বাসস্থানের চার্জ, স্বাস্থ্য বীমা এবং ভ্রমণ ভাতা সহ বছরে গড়ে ২৪,০০০ ডলার উপবৃত্তি প্রদান করে।
ইয়েল ইউনিভার্সিটি সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ দিচ্ছে। এই বৃত্তিটি স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডির জন্য দেওয়া হয়। ইয়েল প্রতি বছর কয়েকশ ডলার থেকে ৭০ হাজার ডলার এর বেশি স্কলারশিপ দেয়। গড় ইয়েল প্রয়োজন-ভিত্তিক বৃত্তি ৫০ হাজার ডলারের বেশি।##