“বহু কাল ধরে এদেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস পালনের পাশাপাশি মিলেমিশে একসাথে থাকার যে ঐতিহাসিক সম্প্রীতি গড়ে তুলেছে সেটিই হলো এদেশের সেকুলারিজম। আদিকাল থেকে বাংলাদেশের জনগণের মূল চেতনাই ছিল সেকুলার। অথচ ঢাকায় বসে এতদিন সেক্যুলারের নামে জাতিকে বিভক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সেকুলার নামে এই বিভাজনকে শুধুই ব্যবহার করেছে”। সম্প্রতি এই কথাগুলো বলেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আলম। বর্তমানে তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।
ছব্বিশের গণআন্দোলনের প্রধান মাস্টারমাইন্ড মাহফুজ আলম আরো বলেন,”জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছিল সম্মিলিত আন্দোলন। সেখানে বিভিন্ন কর্মসূচীতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন সময় পাশাপাশি অবস্থান করা অনেকে দোয়া করার মাধ্যমে একাত্মতা পোষণ করেন। এক মিনিট নিরবতা পালনের সময়ও অনেকেই দোয়া দরুদ পড়ে স্মরণ করেন। সমাজের সব কৃষ্টি কালচারকে একীভূত করার ফলেই গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে যেমন সরকারি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মাদ্রাসা ছাত্ররাও জীবন উৎসর্গ করে সম্পৃক্ত হয়েছে। ছাত্র-জনতার পাশাপাশি আমরা সাধারণ মানুষ ও অজপাড়া গায়ের হুজুরাও সম্পৃক্ত হতে এগিয়ে এসেছে। মুলত আমাদের ভাষা সব ধরনের মানুষ বুঝতে পেরে একাত্মতা প্রকাশ করে ঝাপিয়ে পড়েছে”।
মাহফুজ আব্দুল্লাহ থেকে মাহফুজ আলমে পরিচিতি পাওয়া এই তরুন বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দল গুলোর রাষ্ট্রকে বিভিন্ন দফা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে আরো বলেন,”সবাই ব্যস্ত রাষ্ট্রকে নিয়ে অথচ কারো সমাজ নিয়ে কথা নাই। কিন্তু ব্যক্তি থেকে সমাজ এবং সমাজ থেকে রাষ্ট্রের তৈরি। আপনি ব্যক্তি ও সামাজের ভেতর ফ্যাসিজম রেখে কিভাবে রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিজম দূর করবেন? এই ফ্যাসিজম বিভিন্ন ভাবে তৈরি হয়। এটা ধর্মীয় জায়গা থেকে হতে পারে। বিভিন্ন চেতনাগত জায়গা থেকে হতে পারে কিংবা ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্মৃতি থেকেও হতে পারে। এই ফ্যাসিজমের মোকাবেলা না করে কিভাবে রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিজম নিঃশেষ করবেন? ভেতরের কাঠামোতে জীর্ণতা রেখে সংবিধানের উপরে কাঠামোতে ফ্যাসিবাদ বিদায় করে কখনো লক্ষ্য অর্জিত করা যাবে না”।
সমন্বয়কদের সমন্বয়ক মাহফুজ আলম বলেন, “নির্দলীয় মানে আমরা বুঝাতে চাইছি দলীয় ইকুয়েশন থেকে বেরিয়ে আসতে। অরাজনৈতিক মানে আগের যে রাজনীতি, তার বাইরে বের হয়ে আসতে। তিনি বুদ্ধিজীবীদের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে লেখক আহমদ ছফার উদ্ধৃতি মিলিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবে এটা তখনকার বুদ্ধিজীবীরা আঁচ করতে পারেননি। ২০২৪ এসেও গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি বুদ্ধিজীবীরা বুঝতে না পেরে তারা ফেল মেরেছেন”।
সিরাজুল আলম খানের মতো ঝাগড়া চুলের অধিকারী মাহফুজ আলম আরো বলেন, “জুলাই-আগস্টের ২০/২৫ দিনে গণঅভ্যুত্থানের সময় জাতিকে এক জায়গায় আনা সম্ভব হয়েছে। এ মোমেন্ট টাকে ধরে রাখতে হবে। এই চিন্তা চেতনা ধারণ করে এগুতে হবে । এই চেতনাকে জাগিয়ে তুলে প্রতি-বিপ্লবকে মোকাবেলা করতে হবে”। ##