শনিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদUncategorizedআওয়ামী লীগ ও পুলিশ নিজেরাই ছাত্র-জনতাকে প্রতিপক্ষ বানিয়েছে।।

আওয়ামী লীগ ও পুলিশ নিজেরাই ছাত্র-জনতাকে প্রতিপক্ষ বানিয়েছে।।

গনআন্দোলনে সৃষ্ট গনঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ পুলিশ নিজেরাই ছাত্র-জনতাকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে একাকার হয়ে পড়েছিল। তবে গত এক মাস আওয়ামী লীগ রাজনীতি থেকে হারিয়ে গেলেও পুলিশের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে সবাই সহযোগিতা করছে।

গত ১৫ বছর দেশের প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রধানতম অভিযোগগুলো হল, জনগণের ভোটাধিকার হরণ, গুম-খুন, গণহত্যা, অর্থপাচর, দুর্নীতি ও পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা সহ সব প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী তৃণমূলের এই সংগঠনটি ভোট ছাড়া দীর্ঘ সময় ক্ষমতা থাকতে গিয়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের চরম ভাবে অবহেলা করেছে।

ক্ষমতা থাকাকালীন হাইব্রিড নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত থাকায় অবহেলিত নেতাকর্মীরা দলের এই দুঃসময়ে এখন আর এগিয়ে আসতে চাইছে না। অথচ ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরও বিরূপ পরিস্থিতিতে অনেকেই প্রতিবাদ করেছে।  কিন্তু এবার শুধুই ক্ষমতাচ্যুতির ঘটনায় এখনও প্রতিবাদী হয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।

দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ঠ আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা গত ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন সরকারের কোন অপকর্ম দায় নিতে এখন আর রাজি নয়। বিশেষ করে গণহত্যা ও অর্থপাচরের ঘটনার।


এদিকে গত পাঁচই আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন গণহত্যা ও বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার সহ ভয়াবহ দুর্নীতি ঘটনা গণমাধ্যমে একে একে বেরিয়ে আসতে থাকলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। তারা ভাবতেই অবাক হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের লোকজনের পক্ষে এই জাতীয় অপকর্ম কিভাবে ঘটানো হয়েছে? তাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় নেতাকর্মীরা দলীয় সকল কর্মকান্ড ও আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলা থেকেও বিরত রয়েছে। নিরব থেকে অনেকেই আত্মসমালোচনা করছে বলে নেতাকর্মীরা জানায়।

অন্যদিকে অতি উৎসাহী একটি অংশের কারণে ছাত্র-জনতাকে সরাসরি প্রতিপক্ষ বানিয়েছে পুলিশ। কতিপয় উচ্চবিলাসীরা নিজেদের স্বার্থে আওয়ামী ফ্যাসিজম রাক্ষায় বেপরোয়া গুলি ও অতিরিক্ত বল প্রয়োগের কারণে পুলিশের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ছাত্র-জনতা। “উপরের নির্দেশে” সব অপকর্ম ঘটেছে বলে নিচের স্তরের অনেকেই দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও মানুষের সে ক্ষোভ এখনো প্রশমিত হয়নি।

নিরস্র মানুষকে পুলিশের গুলি করে হত্যা, ওয়ারেন্ট ছাড়া গণগ্রেপ্তার, গায়েবী মামলা, হেফাজতের নামে গুম ও খুনের ঘটনাগুলো ছিল আইন বহির্ভূত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকেই পুলিশী আইন অমান্য সহ চরমভাবে মানবাধিকার লংঘন করেছে।

পুলিশের আইজি থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত পোস্টিং বাণিজ্য ছিল অনেকটা ওপেন সিক্রেট। যারাই অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে সুবিধা নিয়েছে দায় তাদের সবার। পোটিং বাণিজ্যের জন্য খরচ করা অর্থ আদায়ের জন্য প্রায় প্রতিটি থানায় চলেছে সীমাহীন চাঁদাবাজি। পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে ওসি, এসআই, এএসআই,কনস্টেবল পর্যন্ত অনেকেই সরাসরি অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে  জড়িয়ে পড়েছিল। তাই আওয়ামী স্বৈরশাসন রক্ষায় পুলিশের অনেকেই শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়ে উঠেছিল। শেখ হাসিনা দুপুরে পালিয়ে গেলও অনেক স্থানে পুলিশ বিকাল পর্যন্ত ছাত্র জনতাকে প্রতিরোধে ব্যস্ত ছিল। যার কারণে দেশের ৬৫২টি থানার মধ্যে ৪৫০টি থানা আক্রান্ত হয়েছিল। ৪২জন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছে কয়েক’শ পুলিশ। পুলিশের দুই’শ বছরের ইতিহাসে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে এত মৃত্যুর ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।

গত এক মাসেও পুলিশ এখনো ট্রমা থেকে পুরোপুরি বের হতে পারেনি। যদিও প্রতিদিনই পুলিশে চলছে প্রমোশন, পদায়ন সহ চাকরিচ্যুতির ঘটনা। বিভিন্ন অভিযোগে সাবেক দুই আইজিপি এখন কারাগারে। এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লাশের স্তূপে আগুন লাগানো ঘটনায় তদন্ত চলছে।

নতুন করে দায়িত্ব পাওয়া অনেকেই দীর্ঘদিন নিজ পুলিশ বাহিনীতেই বঞ্চিত ছিল। তারা জনগণের বন্ধু হয়ে পুলিশ বাহিনীকে নতুন ভাবে গড়ে তুলতে চায়। প্রধান উপদেষ্টা সহ সবাই পুলিশকে তাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরিয়ে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জনগণ ও পুলিশ একে অন্যকে আস্থায় নিতে হয়ত আরো অনেক সময়ের প্রয়োজন। কারণ থানা ও পুলিশকে জনগণ এখনো ভয় পায়। জনগণের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশকে এই ভীতি কাটিয়ে উঠতে জনগণের কাছাকাছি যেতে হবে।

যেদিন থানাগুলোতে একজন সাধারণ মানুষ কোন হয়রানি ছাড়া সেবা পাবে। এবং সেই সেবার ধারাবাহিকতা চলমান থাকবে। তখনি পুলিশ জনগণের বন্ধুত্বে পরিণত হওয়ার সুযোগ পাবে অনেকেই মনে করছে।####

 

 

আরও পড়ুন
- Advertisment -spot_img

সর্বশেষ