গত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর), মালির রাজধানী বামাকোর সংরক্ষিত এলাকায় বিদ্রোহী জঙ্গি হামলা শতাধিক নিহত এবং কয়েকশো লোক আহত হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়। নিরাপত্তাহীনতার কারণে সেখানকার জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত প্রায় দেড়’শ বাংলাদেশী পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার কোন উদ্যোগ এখনো গ্রহণ করা হয়নি।
রয়টার্স জানায়, বামাকো ভিত্তিক একজন সহ এই অঞ্চলে কর্মরত দুই কূটনীতিক জানিয়েছে, হামলায় মৃতের সংখ্যা ৭০ জনের মত হতে পারে। তবে এই অঞ্চলের আরো একজন তৃতীয় কূটনীতিক দৃঢ়তা বলেছেন, মৃতের সংখ্যা শতাধিক হবে। আহতদের সংখ্যাও কয়েকশো হতে পারে। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে শয্যা ইতিমধ্যে ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু রয়টার্স নিরপেক্ষভাবে এসব তথ্য যাচাই করতে পারেনি।
মঙ্গলবারের হামলার দায় স্বীকার করেছে আল কায়েদার সহযোগী সংগঠন জামা নুসরাত উল-ইসলাম ওয়া আল-মুসলিম (জেএনআইএম)। এদিকে মালির ক্ষমতাসীন জান্তা ভয়াবহ হামলা সম্পর্কে বিস্তারিত কোন তথ্য না দিলেও তারা কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে মালির সংবাদপত্রে প্রায় ৫০ জন পুলিশ ক্যাডেটের শেষ কৃত্যঅনুষ্ঠানের তথ্য জানিয়েছে।
চরম নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকার কারণে রয়টার্স কোন তথ্যই নিশ্চিত করতে পারছে না। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত একাধিক ভিডিওতে হামলায় বিদ্রোহীরা রাষ্ট্রপতির বিমানে আগুন দিচ্ছে এবং পুলিশ একাডেমিতে মৃতদেহের সারি দেখা গেছে।
মূলত মঙ্গলবারের হামলায় বিদ্রোহীরা রাজধানী কেন্দ্রস্থলের সুরক্ষিত এলাকার অভিজাত পুলিশ প্রশিক্ষণ একাডেমী এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলার মাধ্যমে তাদের শক্তি প্রদর্শন করেছে। তারা যেকোনো সময় রাজধানী দখলের সক্ষমতা রাখে বলে জানান দিতে এই হামলা চালিয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার জঙ্গি হামলায় মালির জাতিসংঘ শান্তি মিশন “মিনুসমায়” কর্মরত বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যের উপর হামলার কারণে তারা এখনো চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। হামলায় সাত ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর ক্যাম্পে ফিরে গেলও তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে কিংবা নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের কোন উদ্যোগে এখনো নেয়া হয়নি।
উল্লেখ্য মঙ্গলবারে বিদ্রোহী জঙ্গিদের তীব্র আক্রমণের সময় মালিয়ান সেনাবাহিনীকে অসহায় অবস্থা দেখা গেছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিবর্তে জাতিসংঘ মিশনের কম্পাউন্ডে নিরাপদ আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। তাই এই মালিয়ান সেনাবাহিনীর পক্ষে অন্য কাউকে নিরাপত্তা দেওয়া সক্ষমতা নেই বলে অনেকেই মনে করেন।
এদিকে নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাংলাদেশ পুলিশের ১৪০ জন সদস্যদের স্থানান্তরের ব্যাপারে বাংলাদেশেস্থ জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুইন লুইস এক ইমেইল শান্তিরক্ষা বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে উত্তর দিবেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে।
২০২৩ সালের ৩০ জুন মালির শান্তিরক্ষী মিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মিশনের সদস্যদের প্রস্তানের জন্য ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৩ হাজার শান্তিরক্ষী সৈন্যদের সবাইকে ইতিমধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মিনুসমার হেডকোয়ার্টারের ভেতরের নিরাপত্তার ও মিশনের অবশিষ্ট মালামাল কন্টেইনার করে প্রস্তানের কারণে শুধুমাত্র বাংলাদেশে পুলিশ সদস্যরা গার্ড ইউনিট হিসেব ক্যাম্পের ভেতর দায়িত্ব পালন করছে। আগামী নভেম্বরে তাদের দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে।
উল্লেখ, ২০১৩ সালে মালিতে জাতিসংঘ মিশন শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩০৩ জনেরও বেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছে। তাই এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।##