দলীয় পরিচয় গোপন করে ছাত্র শিবির বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিউক্লিয়াস ভূমিকা পালন কারার কারণে গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টিতে তারা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
দেড় মাসের মাথায় হঠাৎ নিজেদের শিবির পরিচয় প্রকাশ্যে আনার মাঝে কি ৪২ বছর আগের কোন ঘটনার সংশ্লিষ্ট আছে কিনা? তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ১৯৮২ সালের সেদিনও ছাত্রশিবিরের মেধাবী ছাত্ররা জামাতে ইসলামীর সাথে গঠনতন্ত্রের বিরোধী জড়িয়ে ইসলামী যুব শিবির প্রতিষ্ঠা করে আলাদা হয়েছিল।
গত ১৫ বছর জামাত শিবির অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ থাকার কারণে নতুন ভাবে রিক্রুটকৃত হাজার-হাজার ছাত্রশিবির কর্মীরা পুরানা কোন অপবাদ ছাড়া খুব সহজে সংগঠন গড়ে তুলতে পেরেছিল। ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক আদর্শিক মান অক্ষুন্ন রেখে তাদের অনেকেই লেখাপড়ার উন্নতির পাশাপাশি ক্রিয়েটিভ কর্মকান্ডের সংশ্লিষ্ট থেকে নিজেরা ব্যক্তিগত ভাবে প্রতিষ্ঠার সাথে সংগঠনকেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ছদ্মাবরণের কারণে ছাত্রশিবিরের এই মেধাবির তরুণদেরকে সবাই সহজে কাছে টেনে নেয়।
তাই ফ্যাসিস হাসিনা সরকার পতনে এই মেধাবীরা সহজে নিউক্লিয়াসের ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয় এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অনেকেই ম্যাচুয়েড ভাবে এত বড় মুভমেন্ট হ্যান্ডেল করতে সক্ষম হয়। নির্দলীয় ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের সফলতায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতা কর্মীরা সর্বস্তরের ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
ছাত্রদের সীমাহীন জনপ্রিয়তার শক্তির কারণে গত দেড় মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা সহ বিভিন্ন সংকটকালীন সময় সহজে মোকাবেলা করে এগিয়ে চলছে । বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়দেরকে আগামীর দেশ পরিচালনার ভবিষ্যত হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জনগণের কাছে বারবার পরিচয় করিয়ে দেয়। মুখ্য সমন্বয়কদের দুই জনকে উপদেষ্টা সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগী হিসেবে নিয়োগের মাধ্যমে তাদের সম্মানিত করা হয়। নিরপেক্ষ এই তরুণ ছাত্রদেরকে সর্বস্তরের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক পথের ত্রাতা হিসেবে দেখতে শুরু করে।
গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ মুখ্য সমন্বয়েকদের দুইজনের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ্যে ঘোষণার মাধ্যমে সামনে এলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নিরপেক্ষ চরিত্রে বড় ধাক্কা লাগে। এতে অনেকেই হতবাক হয়ে পড়ে।
তাছাড়া গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের মাঝে নিজেদের দলীয় কর্মীর পরিচয়ের পরিবর্তে জামাতে ইসলামী শহীদের সবাইকে নিজেদের লোক পরিচয় দিয়ে যে মহাত্মা দেখিয়েছে। সেখানে হঠাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের উন্মেষ ঘটানোকে অনেকেই বৈপরিত্যমূলক বলে অবহিত করছে। হঠাৎ জামাতের এই ইউ টার্নের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
ছাত্রশিবিরের দলীয় পরিচয় প্রকাশ্যে আনাটা কি শিবিরের একান্ত দলীয় সিদ্ধান্ত ? নাকি জামাত ছাত্রদের ছদ্মাবরণের থাকা মেধাবি শিবিরের নেতাদের সীমাহীন জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে।
তবে জামাতের এই সিদ্ধান্তের ফলে একদিকে সার্বজনীন দল নিরপেক্ষ এই আন্দোলনের ক্রেডিট দলীয়ভাবে জামাত তার দিকে ধাবিত করার চেেষ্টা চালাবে । অন্যদিকে ছদ্মাবরণের থাকা মেধাবি জনপ্রিয় ছাত্র নেতাদের ছাত্রশিবিরের পরিচয়ের মাধ্যমে জামাত-শিবিরের ব্যাকেটে আবদ্ধ করে নির্দিষ্ট করে ফেলা হবে।
১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর মাত্র ছয় বছরের মাথায় ১৯৮২ সালে এসে তখনকার মেধাবীদের আকৃষ্ট করে ছাত্রশিবির জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠনের পরিণত হয়েছিল। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারা দেশের শিবিরের প্রথম উত্থান ঘটে। সে সময় ছাত্রশিবিরের উপর জামাতে ইসলামীর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার প্রতিবাদের তৎকালীন ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আহমেদ আব্দুল কাদের জামাত বলয় থেকে বেরিয়ে আলাদা যুব শিবির গঠন করে। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসে ৪২ বছরে আগের ছাত্র শিবিরের সেই স্মৃতিকে স্মরণ করছে অনেকেই।