গত বুধবার সন্ধ্যায় নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণের সময় টায়ার ফেটে (বাস্ট) যাওয়ায় নভোএয়ার ফ্লাইটের যাত্রীরা চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।। তবে পাইলট তাৎক্ষণিক দক্ষতার সাথে বিমান থামিয়ে ফেলায় কেউ হতাহত হয়নি । ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এই ফ্লাইটে ৭০জন যাত্রী ছিলেন।
টায়ার ফেটে যাওয়ার কারণে সব চেয়ে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনাটি ঘটে ১৯৯৯ সালে। এই বছরের ১১ই জুলাই সৌদি আরবের জেদ্দা কিং আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই নাইজেরিয়া ডগলাস ডিসি-৪ যাত্রীবাহী এয়ারওয়েজ ফ্লাইট 2120 বিধ্বস্ত হয়ে যাত্রী এবং ক্রু সহ ২৬১জন নিহত হয়।
কানাডিয়ান কোম্পানি নোলিসায়ারের মালিকানাধীন লীজ দেয়া ফ্লাইটিতৈ উড্ডয়নের সময় ফেটে যাওয়ার কারণে হটাৎ টায়ার ঘোরানো বন্ধ হয়ে যায়।
তখন রানওয়ের সাথে টায়ারের তীব্র ঘর্ষণে প্রচন্ড তাপ উৎপন্ন হয়। “জ্বলন্ত রাবারকে হাইড্রোলিক এবং বৈদ্যুতিক সিস্টেমের উপাদানগুলি জ্বালানী ট্যাঙ্কের ‘বার্ন থ্রু’ এর ফলে আগুন তীব্রতায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি সংগঠিত হয় বলে তদন্ত রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়।
সাধারণত যানবাহনের টায়ার এবং বিমানের টায়ারের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। একটি ট্রাক টায়ারের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা তিন থেকে ছয় টন । বিমানের ক্ষেত্রে ৫০ টন বহনের ক্ষমতা থাকলেও, বিমানের প্রকারভেদে জরুরি পরিস্থিতি আরও অনেক বেশি বহনক্ষমতা ধারণ করতে হয় সেই টায়ারকে । ফ্লাইট টেকঅফের সময় ২শ থেকে ৩শ কিলোমিটার বেগে নামতে হয়। তখন টায়ার কয়েকশ সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে পড়ে।
বিমানের টায়ার তৈরি করাও বেশ জটিল। টায়ারগুলি লক্ষাধিক পাউন্ডের বেশি ওজনের এক একটি জেট ল্যান্ডিংকে স্বাভাবিক মাধ্যাকর্ষণ (2 Gs) বা স্বাভাবিক ডিসেন্ট রেট থেকে দ্বিগুণ বেশি ল্যান্ডিং সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হয় এবং সেখানে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। উৎপাদনে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং বিশেষ প্রক্রিয়ার খুবই শক্তিশালী ভাবে বিমানের টায়ার তৈরি করতে হয়।
ফ্লাইটের টায়ারে বাতাসের পরিবর্তে নাইট্রোজেন দিয়ে পূর্ণ করতে হয়। নাইট্রোজেন আগুনের সম্ভাবনা কমায়। টায়ার ফেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখতেই এই ব্যবস্থা। এবং বড় জেটের ল্যান্ডিং গিয়ারে টায়ারে বাতাসের চাপ 200psi-এর বেশি থাকে।
বেশিরভাগ আধুনিক বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারে একাধিক টায়ার থাকে। যদি পাইলটরা টেকঅফের সময় একটি টায়ার ফেইল করে, তাহলে বিকল্প টায়ার ব্যবহার করে কিংবা টেকঅফ বাতিল করে। এবং যাত্রা বাতিল করে জরুরী নিরাপত্তা নিয়ে ল্যান্ডে ফিরে আসে। অবতরণের সময়ও টায়ারে সমস্যা হলে, জরুরী অবতরণই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
টায়ার বিমানের নিরাপদ অপারেশনে একটি বড় ভূমিকা পালন করে এবং অবহেলিত টায়ার দুর্ঘটনায় কারণ হতে পারে। যেহেতু এয়ারক্রাফ্ট টায়ার ল্যান্ডিং গিয়ার সিস্টেমের অংশ, নিয়মিতভাবে ঞটায়ারগুলি পরীক্ষা করা, সঠিক হাওয়া দেয়া, সঠিকভাবে সার্ভিসিং করা, ভালো ব্যান্ডের টায়ার ব্যবহার নিশ্চিত করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে