শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রচ্ছদযাদের হারিয়েছিএকজন সিরাজুল ইসলামই ছিলেন দেশে টায়ার ব্যবসার প্রতিচ্ছবি

একজন সিরাজুল ইসলামই ছিলেন দেশে টায়ার ব্যবসার প্রতিচ্ছবি

মানবিক মূল্যবোধ ও কর্মের প্রতি নিষ্ঠার অসাধারণ ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নেওয়, চট্টগ্রামের টায়ার ব্যবসায়ীদের লিজেন্ট ছিলেন আলহাজ্ব মো: সিরাজুল ইসলাম। 

দানবীর,  এই চির তরুণের ছিল মানুষকে বোঝার এবং মানুষের সাথে মেশার দুর্লভ ক্ষমতা। সকল স্তরের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাকে সহজে আপন করে নেওয়ার অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন জিটি টায়ারের মো: সিরাজুল ইসলামের।

একাধারে তিনি চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক, চট্টগ্রাম টায়ার-টিউব ইম্পোটার্স এন্ড ডিলার্স গ্রুপের সব সময়ের অভিভাবক, নোয়াখালীর মাইজদীর ডায়াবেটিকস হাসপাতালের সহ সভাপতি এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক, চট্টগ্রাম নোয়াখালী সহ সারা দেশে অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা সহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক পৃষ্ঠপোষক, মাইজদীর অরুণ চন্দ্র হাই স্কুলের সাধারণ ছেলেটি সারাদেশে সমাজসেবা কি অসাধারণ ভূমিকা রেখে গেছেন, তার সবটুকু হয়তো  তিনি নিজেও জানতেন না।

প্রতিবছর  কমপক্ষে পাঁচ জনকে পবিত্র হজ্ব পালনে সমুদয় অর্থের যোগান দাতা, আগ্রাবাদের মহিলা কলেজ,  বালিকা বিদ্যালয় ও হাতে খড়ি স্কুল সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আগ্রাবাদ সিডিএ মসজিদ কমিটির ও জনপ্রিয় সামাজিক সংগঠন আরাসকা’র সভাপতি এবং চোখের অপারেশনের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে অগণিত মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার আর্থিক অভিভাকত্ব ও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা সহ অভাব ও ঋণ গ্রস্ত বহু মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল ছিলেন, চৌমুহনী কলেজে ষাটের দশকে ইন্টার মিডিয়েট পড়ুয়া তরুণটির। তিনি নিজেই হয়ত জানতেন না, তিনি মানবিকতার কতবড় দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।

এত বহুমাত্রিক গুণে গুণান্বিত সিরাজ সাহেবের ছোটবেলা এত কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। তিন ভাই দুই বোনের অভাবের সংসারের মধ্যে তিনিই একমাত্র লেখাপড়ার মনোনিবেশ করেছিলেন।

মাইজদীর “মজিদ হাজি বাড়ির”  ছেলেটি  ১৯৬২ সালে মাইজদীর “অরুণ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়” থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৬৪ সালে চৌমুহনী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন।

এরপর  জীবিকার সন্ধানে তিনি চট্টগ্রামের শিল্প ব্যাংকে চাকরির পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ৮/১০বছর শিল্প ব্যাংকে চাকরির পর ওনাকে বগুড়া বদলি করলে তিনি সেখানে দুই মাস থেকে, চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসার জন্য চট্টগ্রামের স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

সত্তরের দশকের শেষ দিকে তিনি চট্টগ্রামের আরেক দিকপাল ব্যবসায়ী, আল হাবিব মোটরস এর স্বত্বাধিকারী মরহুম মোশাররফ সাহেবের সাথে যৌথভাবে এম এম মোটরস নামক প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা চালিয়ে যান। সেই সময় উনারা বেবিট্যাক্সি এবং রিক্সা/সাইকেলের অরোরা এবং সোয়ালো ব্র্যান্ড টায়ার আমদানির মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করেন।

মোশারফ সাহেব এবং সিরাজ সাহেব আশির দশকের শেষ দিকে দুইজন পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে উনারা আলাদা হয়ে যান । এরপর সিরাজ সাহেব এম এম মোটরসের স্বত্বাধিকারী  হিসাবে জিটি টায়ারের ব্যবসা শুরু করেন।

১৯৯৫ সালে হঠাৎ সারা বিশ্বে টায়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা সিরাজ সাহেবের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও সুদৃঢ় হয়।এরপর জিটি টায়ারের উত্থান ঘটে সারাদেশব্যাপী। টায়ারের ডিলারশিপ ব্যবসার প্রচলন মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।

সারাদেশের তৃণমূলে অতিসাধারণ টায়ারের দোকানদারকে টায়ার ব্যবসার মূল স্রোতে নিয়ে আসার চেষ্টাতেও তিনি সফল হয়েছেন ।এতে তিনি যেভাবে তার ব্যবসা সমৃদ্ধ করেছেন।তেমনি সারা দেশে শত শত ক্ষুদ্র টায়ার ব্যবসায়ীরা উনার সংস্পর্শে এসে সমাজে আজ পরিচিতি এবং প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

দাপিয়ে বেড়ানোর চিরতরুণ সিরাজ সাহেব এনসিসি ব্যাংক,গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন।

ব্যবসায়ী হিসেবে উনার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তিনি কখনও কমিটমেন্ট মিস করতেন না । ব্যবসার ক্ষেত্রে  ছোট-বড়, আত্মীয়-অনাত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব সহ সবার জন্য তার কাছে পন্যের মূল্য তালিকা ছিল সমান।

যোগ্য সহধর্মিনী ও দুই মেয়ে-এক ছেলের গর্বিত পিতা এবং সবার প্রিয় এই সজ্জন এবং গুণী মানুষটি গত ২৯ অক্টোবর রোজ শুক্রবার সবাইকে রেখে না ফেরার দেশে চলে যান।

 

সহযোগিতায় :

জনাব মধু বাবু, সোনালী মটরস

জনাব আবদুল ওয়াদুত, মাসুম মটরস।

 

আরও পড়ুন
- Advertisment -spot_img

সর্বশেষ