হামাস দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে ইসরাইলকে যুদ্ধ বিরতিতে বাধ্য করিয়ে ইসরায়েলি জিম্মি বিনিময়ের মাধ্যমে হাজার-হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্ত করতে চায়। সেই সাথে গাজায় ইসরায়েলের ১৭ বছরের অবরোধের অবসান, ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ বন্ধ এবং আল-আকসা মসজিদ মুক্ত করতে চায়।
হামাস সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, দীর্ঘদিন ধরে গাজাকে শাসন করে, অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র, খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী মজুত করেছে হামাস। তাদের হাজার হাজার যোদ্ধা ফিলিস্তিনি ছিটমহলের গভীরে খোদাই করা সুড়ঙ্গের একটি শহরে কয়েক মাস ধরে বেঁচে থাকতে পারে এবং সুড়ঙ্গের গেরিলা কৌশলের আক্রমণে ইসরায়েলি বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়ার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করেছে।
তাছাড়া বেসামরিক হতাহতের ঘটনা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় গাজার অবরোধের অবসানের জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। এতে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে যেতে বাধ্য হবে। পাশাপাশি ইসরায়েলি বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে হাজার-হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্ত করবে। এদিকে হামাস কাতারের মধ্যস্থতায় জিম্মি আলোচনায় পরোক্ষভাবে মার্কিন ও ইসরায়েলকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা জিম্মিদের বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য করতে চায়।
হামাস আরো বলেছে, তারা গাজায় ইসরায়েলের ১৭ বছরের অবরোধের অবসান ঘটাতে চায়, সেইসাথে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ বন্ধ এবং মুসলিমদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী মুক্ত দেখতে চায়।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা গাজায় একটি মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন যে, ফিলিস্তিনিরা গণহত্যার গুরুতর ঝুঁকির মধ্য রয়েছে । তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে নিশ্চিহ্ন করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে, যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এখন সাধারণ যুদ্ধবিরতির সময় নয়।
এদিকে জর্ডানের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী যিনি এখন ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য কার্নেগি এনডাউমেন্টের জন্য কাজ করেছেন তিনি বলেছেন, হামাসকে ধ্বংস করার মিশন সহজে অর্জিত হবেনা।
হামাসের প্রায় ৪০ হাজার যোদ্ধা রয়েছে। তারা কয়েকশ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৮০ মিটার পর্যন্ত গভীর সুড়ঙ্গের সুবিশাল জাল ব্যবহার করে ছিটমহলের চারপাশে ঘুরে বেড়াতে পারে , যা তারা বহু বছর ধরে নির্মাণ করেছে। বৃহস্পতিবার, গাজায় হামাস যোদ্ধারা টানেল থেকে হঠাৎ ইসরায়েলী ট্যাঙ্কে হামলা চালায় এবং মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ভিডিও গণমাধ্যম দেখা গেছে।
কাতার ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক ফিলিস্তিনি বিশেষজ্ঞ আদিব জিয়াদেহের মতে, ইসরায়েলের উপর হামলা চালানোর জন্য হামাসের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছিল। যারা ৭ই অক্টোবর খুবই দক্ষতার সাথে, নির্ভুল এবং তীব্রতার ভাবে হামলা চালিয়েছে, তাদের অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি থাকবে। সম্পূর্ণ প্রস্তুত না হয়ে হামাসের পক্ষে এ ধরনের হামলা করা সম্ভব নয়।
গত কয়েক দশকে ইসরায়েলের সাথে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ করেছে দাবি করে হামাসের বৈরুত-ভিত্তিক প্রধান আলী বারাকা বলেন, হামাস ধীরে ধীরে তার সামরিক সক্ষমতা, বিশেষ করে তার ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নতি করেছে। ২০০৮ সালের গাজা যুদ্ধে, হামাসের রকেটের সর্বোচ্চ রেঞ্জ ছিল ৪০ কিলোমিটার। প্রতিটি যুদ্ধে হামাস ইসরায়েলিদের নতুন কিছু দিয়ে চমকে দিচ্ছে।
ইরান-সমর্থিত লেবানিজ আন্দোলন হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সুত্র মতে, কয়েক সপ্তাহের বোমাবর্ষণের পরও হামাসের শক্তি অক্ষত রয়েছে। হিজবুল্লাহ এবং হামাস কর্মকর্তাদের মতে, ইরান সমর্থিত একটি আঞ্চলিক নেটওয়ার্কে হামাস এবং অন্যান্য সহযোগী গোষ্ঠীর সাথে লেবাননে হিজবুল্লাহর একটি যৌথ সামরিক অপারেশন মনিটর করছে।####