জামাত-শিবিরের কৌশলি রাজনীতির কাছে পরাস্ত হয়ে আওয়ামী লীগ কি এখন সেই পথেই হাঁটছে?
গত ১৫ বছর অলিখিত ভাবে নিষিদ্ধ থাকার সময় জামাত-শিবিরকে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে দেখা যেত না। তবে তারা ছাত্রদের দাবি আদায়ের, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সক্রিয় ছিল। তাদের তখনকার রাজনীতি সাদা চোখে দেখা যেত না। তাই বিগত সরকার জামাত-শিবিরের রাজনীতির কৌশল ধরতে পারেনি। অন্যান্যদের সাথে থেকে সফল আয়োজনের মাধ্যমে জামাত শিবির পাঁচই আগস্টের বিপ্লব সফল করেছিল।
তাই প্রশ্ন উঠেছে জামাত-শিবিরের মত কৌশলি ছদ্মাবরণে আওয়ামী লীগ কি আবার রাজনীতির মাঠে সংঘটিত হচ্ছে? গত দেড় মাসে বিরূপ পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন ব্যানারে আওয়ামী লীগ তার অবস্থান জানান দিচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানায়।
হামলা, নির্যাতন ও অপপ্রচারের মুখে জামাত-শিবির বিকল্প ব্যানারে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য অর্জনে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হলেও আওয়ামী লীগের একাধিক শক্তিশালী ছদ্মাবরণের ব্যানার থাকায় তারা অতি অল্প সময়ে জড়তা কাটিয়ে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারবে বলে নেতাকর্মীরা মনে করে।
সম্প্রতি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়কদের একজন সাদিক কায়েম নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি হিসেবে ঘোষনা দেওয়ার মাধ্যমে বিগত সময়ে শিবিরের রাজনৈতিক কৌশলে ঘটনাটি সবার সামনে এসে পড়ে। এর ফলে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময়ের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে এসেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। অথচ শিবির সভাপতির রুমমেট দুই বছর ধরে একসাথে থাকার পরও জানতো না সাদিক কায়েম শিবির করতো।
সাদিক কায়েম নিজ জেলা খাগড়াছড়ি থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করার পর চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ থেকে আলিম পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হয়। ছিলেন মেধাবী শিক্ষার্থী। যদিও প্রথম দিকে ছাত্রলীগের ফ্রেশ ইমেজের ছেলের পরিচয়ে ছাত্রলীগ নেতা সুপারিশে তিনি সূর্যসেন হলে উঠেছিলেন।
কিন্তু ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী সাদিক কায়েমকে প্রথমে “সমর্থক” পরে “কর্মী” তারপর “সাথী” এবং পরের সর্বোচ্চ পদ “সদস্য” হওয়ার পরেই তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবির সভাপতি করা হয়। ছাত্রশিবিরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছতে সাদিককে অবশ্যই আট থেকে দশ বছর সেই সংগঠনের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্ক রাখতে হয়েছে। অথচ দেশের বাঘা বাঘা গোয়েন্দা, প্রশাসন সহ তার রুমমেট পর্যন্ত বিষয়টি টেরই পেল না।
এক সাদিক কায়েমের মধ্যে দিয়ে ছদ্মাবরণে থাকা দেশের হাজার-হাজার ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা কিভাবে ফ্যাসিস বিরোধী আন্দোলনেটক ঢুকিয়েছিল তা নিয়ে চলছে ব্যাপক বিচার-বিশ্লেষণ।
গত ১৫ বছর অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ জামাত শিবিরের পুরনো নেতাকর্মীদের ব্যাপারে প্রশাসন সজাগ থাকলেও নতুন রিক্রুটমেন্টকৃত নেতাকর্মীদের ব্যাপারে সরকার ছিল অন্ধকারে। বিশেষ করে শিবিরের ছেলেরা সাধারণ ছাত্রদের ছদ্মাবরণে শিক্ষাঙ্গনে ছিল বেশ সক্রিয়। মেয়েরাও এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল না। কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে,” আন্দোলনে জামাত শিবির ঢুকে পড়েছে বলে ব্যাপক অভিযোগ ছিল। কিন্তু তখন প্রশাসনের কাছে এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য প্রমাণ ছিল না। কারণ ছাত্র শিবিরের রাজনৈতিক কার্যক্রম অলিখিত ভাবে নিষিদ্ধ থাকায় তাদের কেউই চিনতো না।
ছাত্রশিবিরের শীর্ষ পদে সাদিক কায়েমের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় গণমাধ্যম সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সহ সমালোচনা হতে থাকলেও আন্দোলনে জামাত শিবিরের রাজনৈতিক কৌশলের প্রশংসা করছে কেউ কেউ।
আন্তর্জাতিক শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, সিআইএ কিংবা ‘র’ এর সদস্যদের মত সাদিক কায়েম দীর্ঘদিন ধরে পরিচয় গোপন রাখার বিষয়টি সবাইকে অবাক করেছে। জামাতের আমির শফিকুর রহমানের পর তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের সাদিক কায়েমে এখন বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে ফ্যাসিজমের দায়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ ও তার ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে দেশের ছাত্রসমাজ এখন ঘৃণা করে। সুতরাং দলীয় পরিচয়ে সহসা তাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। তাই গত দেড় মাসে ছদ্মাবরণে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ব্যানারে আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে। তাই জামাত-শিবিরের মত ছদ্মাবরণের কৌশল ধারণ করে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাবে বলে নেতা কর্মীরা মনে করছে।###