
আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ,বৃষ্টি তোমাকে দিলাম,শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম…। শ্রীকান্ত আচার্যের জনপ্রিয় গানের সাথে যেন নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের বনভোজন মিলে মিশে একাকার হয়ে ওঠে। আয়োজকরা সকালের বৈরি আবহাওয়া দেখে বনভোজন বাতিল করবে কি-না তা নিয়ে ছিল বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে। কিন্তু শনিবার (১৪ জুন) দুপুর গড়িয়ে যেতেই সাংবাদিকদের অনেকেই পরিবারসহ ও আমন্ত্রিতদের সবাই ব্রঙ্কসের গ্লেন আইল্যান্ড পার্কের প্যাভিলিয়ান-টুতে এসে হাজির হন। পরস্পরকে দেখে সবার মাঝে জেগে উঠলো প্রাণের স্পন্দন। ছড়িয়ে পড়লো উৎসবের আমেজ।
বনভোজনে নারী,পুরুষ,শিশু সবার আবেগে ছিলো উচ্ছ্বাসের জোয়ার। “সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে রে.., আমি বলি কমে..।” গুণী কণ্ঠশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ের গানের মত অন্তরের মাঝে তারুণ্যের স্পন্দন লালনকারী বয়স্করা হয়ে উঠল চির তরুণ রূপে। তাই তো আমন্ত্রিত কণ্ঠশিল্পী কৃষ্ণা তিথি, মরিয়ম মারিয়া ও নিপা জামানদের সংগীতের সুরের মূর্ছনা যখন ছড়িয়ে পড়ল তখন বুকের ভেতর অনেকেই অনুভব করল, ফেলে আসা তাদের নস্টালজিয়া জগততে। হারিয়ে গেল সবাই নিজ ভুবনে। নিউইয়র্ক সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ষ্টেট সহ বাংলাদেশ থেকে আগত রাশভারী ব্যক্তিত্বের বাঘা বাঘা সাংবাদিকরা নিজেদের বাইরের খোলস ছেড়ে হঠাৎ তরুণ হয়ে উঠলো। নেচে গেয়ে মাতিয়ে তুলল বনভোজনের পুরো আমেজকে।

বনভোজনের পুরো সময় ঝড় বৃষ্টির মাঝেও থেমে ছিল না শিশুদের দুরন্তপনা। প্রেসক্লাবের নারী সদস্য সহ পুরুষ সদস্যদের পরিবার পরিজনরা ছোট ছোট গ্রুপে আড্ডায় মেতেছিল সারাক্ষণ। বনভোজনের পুরো পরিবেশটি ছিল আনন্দমুখর।পরস্পরের মাঝে চলমান সম্পর্ক আবার নতুন করে মেলে ধরার সুযোগের সৃষ্টি হয়েছিল। বনভোজনে পরিবার পরিজন নিয়ে আগত মূলধারার নারী নেত্রী মেরি জোবাইদা জানান,”যখনই এই ধরনের বনভোজনের অনুষ্ঠানগুলো হয়, তখন আসতে পেরে সব সময় ভালো লাগে। আমরা আমাদের পরিবার পরিজন সবাইকে নিয়ে আসি এবং সবাই সবাইকে জানার, দেখার এবং নতুন করে বন্ধন জোরালো করার সুযোগের সৃষ্টি হয়।এই সুযোগটি আমরা সবসময় উপভোগ করি।
সকালের নাস্তার পর দুপুরে বনভোজনের মুল অনুষ্ঠান পর্বে শুরু হয়। প্রেসক্লাবের সদস্যদের পরিচিতি সহ আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে সবার পরিচিতি পর্বের পর বনভোজনের ‘ভয়েস’ শীর্ষক স্যুভেনির উন্মোচন করা হয়। এরপর বেলুন উড়িয়ে বনভোজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করার পর মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয়। বিকেলের বিশিষ্ট শিল্পীদের পরিবেশনায় সংগীত অনুষ্ঠান ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
বনভোজনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও কাঙ্খিত পর্ব ছিল রাফেল ড্র। যা শেষ বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তখন পর্যন্ত পেশার দায়িত্বশীলতার কারণে বনভোজন স্থান ত্যাগ করতে হয়েছে অনেককেই। তবে যেখানে থাকুক না কেন সবার মধ্যে ছিল উৎকণ্ঠা।রাফেল ড্র ভাগ্যবানদের সংখ্যা ছিল অল্প কয়জন। তাই তো বেশিরভাগ সদস্যদেরকে ক্ষনিকের জন্য হলেও পুরস্কার না পাওয়ার হতাশায় পুড়িয়েছে। বৈরীর আবহাওয়া, মিলন মেলা, উৎসব, পুরস্কার পাওয়া খুশি, না পাওয়ার আক্ষেপ মিলে সুন্দর ভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকল বনভোজনের দিনটি।

এর আগে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি মনোয়ারুর ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মমিন মজুমদার সহ কার্যকরী পরিষদের কর্মকর্তারা বনভোজনে আগত অতিথিদের স্বাগত জানান।
একগুচ্ছ বেলুন উড়িয়ে যৌথভাবে বনভোজনের উদ্বোধনী করেন ক্লাবের সাবেক সভাপতি, টাইম টেলিভিশনের সিইও-ও সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা সম্পাদক আবু তাহের এবং ক্লাবের সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াজেদ এ খান । অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ক্লাবের সহ সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের মাঝে আমন্ত্রিত সম্পাদক ও সাংবাদিক এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম শামীম রেজা, মোহাম্মদ সাঈদ, শওকত ওসমান রচি, সাপ্তাহিক মঞ্জুরুল হক, শামীম আহমেদ, জুয়েল আহসান, বেলাল আহমেদ, হাকিকুল ইসলাম খোকন, মোহাম্মদ কাশেম, আবু বকর সিদ্দিক, সাখাওয়াত হোসেন সেলিম।
ক্লাব কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা ডা. চৌধুরী সারোয়ারুর হাসান, মাহমুদ খান তাসের ও এবিএম সালেউদ্দিন, ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন, ড. ইমরান আনসারী, হাসানুজ্জামান সাকী, সুলতানা রহমান, মেহেরুননেসা জোবায়দা, ও জামিল আনসারী। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অনেকেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতায় অন্যান্যের মাঝে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইলিয়াস খসরু।##

