এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরের বাইরে, মধ্যপ্রাচ্য চীনের জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে পরিনিত হয়েছে। সৌদি আরব এবং ইরানের তিক্ত সম্পর্কে বরফ গলানোর পর চীন এবার ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলের মধ্য সম্পর্ক উন্নয়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বর্তমানে তিন দিনের সফরে চীনে অবস্থান করছে। চীন ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রত্বের সংগ্রামের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এমন এক সময়ে বেইজিং সফর করছে যখন চীন মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাবের বিপরীতে অবস্থান সৃষ্ট করছে।
অন্যদিকে ইসরায়েল প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শপথ গ্রহণ কালে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তার সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা অব্যাহত রেখে চীনের সাথে বাণিজ্যের জন্য ইসরায়েলকে উন্মুক্ত করতে চায়। এদিকে চীন বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার এবং পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চীনের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক শক্তির কারণে বেইজিংকে ওয়াশিংটনের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সুয়েজ খালের মাধ্যমে ভূমধ্যসাগর এবং ইউরোপের সাথে সংযুক্ত করে, মধ্যপ্রাচ্য চীন একটি কৌশলগত অবস্থান নিশ্চিত করছে। চীনের বিশাল অবকাঠামো বিনিয়োগ “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)” প্রকল্পটি এশিয়া এবং ইউরোপকে সংযুক্ত করে, আফ্রিকা, ওশেনিয়া এবং লাতিন আমেরিকায় বিস্তৃত করার পথে এগোচ্ছে।
চীন তার অর্ধেক তেল মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা থেকে আমদানি করে এবং সৌদি আরব ও ইরান উভয়েরই চীনের শীর্ষ তেল গ্রাহক। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা মনে করছে যে, চীন ২০৩৫ সালের মধ্যে এই অঞ্চল থেকে তেল আমদানি দ্বিগুণ করবে।
মধ্যপ্রাচ্যের সাথে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ২০১৩ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আনুষ্ঠানিক ভাবে সূচনার করেছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ১৮ তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে, বেইজিং মধ্যপ্রাচ্যকে একটি “প্রতিবেশী” অঞ্চল হিসাবে মনোনীত করেছে তাই মধ্যপ্রাচ্য এখন চীনের শীর্ষ অগ্রাধিকার ভূ-কৌশলগত অঞ্চলের মধ্যে পড়েছে।
এই অঞ্চলে চীনের বেশিরভাগ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উপসাগরীয় দেশগুলির সাথে জড়িত, যা শক্তি, অবকাঠামো নির্মাণ, পারমাণবিক শক্তিতে বিনিয়োগ, নতুন শক্তির উৎস, কৃষি এবং অর্থের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।
সৌদি আরব এবং ইরানের সাথে বেইজিংয়ের সম্পর্ক বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরব এবং ইরানের তিক্ত সম্পর্কে বরফ গলানোর পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদার করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে চীন।
ইরান মধ্যপ্রাচ্যে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের একটি কেন্দ্রীয় প্রানকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবে। যেখানে চীনা কারখানা, সড়ক, রেল এবং বন্দর প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম গড়ে তোলা হবে।
মিশর, ইসরায়েল এবং জর্ডান বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রচেষ্টার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপে যাওয়া চীনা পণ্যের বেশিরভাগই সুয়েজ খাল দিয়ে যায় এবং বেইজিং সক্রিয়ভাবে খালের চারপাশে সবার সাথে সবার সম্পর্কের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে।
জর্ডান ইতোমধ্যেই ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে যোগ দেয়, চীনের সাথে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চুক্তি স্বাক্ষর করে। পরবর্তী দেশে নিরাপত্তার উন্নতি হলে জর্ডান ও সিরিয়ায় ভবিষ্যতে চীনা বিনিয়োগের জন্য একটি স্টেজিং পয়েন্ট হয়ে উঠতে পারে।
ইসরায়েল চীনের সাথে একটি উচ্চ-গতির রেল প্রকল্প অনুসরণ করছে যা ভূমধ্যসাগরের তেল আবিবকে লোহিত সাগরের ইলাত থেকে সংযুক্ত করবে।
মূলত বর্তমান মন্দা বিশ্বে অর্থনৈতিক কারণে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরে জনগণের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। অর্থনৈতিক উন্নতির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তা লাগবের এই সম্ভাবনা মধ্যপ্রাচের দেশগুলো চীনের বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের হাতছানিকে উপেক্ষা করতে পারছে না।
তাই ইরান ও সৌদি আরবের তিক্ত সম্পর্কে বরফ গলানোর পর এবার ফিলিস্তিনি এবং ইসরাইল মিশনে নেমে চীন মধ্যপ্রাচ্যে নিজের দৃঢ় অবস্থানের জানান দিচ্ছে।#####