তারুণ্যের শক্তিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার পরিনাম কি হয়েছে তা গত ৫ অগাস্ট অবলোকন করেছে সারা বিশ্ব। পনের বছরের স্বৈরতন্ত্র পতনের অবিশ্বাস্য ঘটনা তারা ঘটিয়েছে মাত্র ৩৬ দিনে। তাই দেশের প্রায় পাঁচ কোটি তারুণ্যের চিন্তা চেতনাকে ধারণ করে আগামীতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
শেখ হাসিনার দম্ভ, একগুঁয়েমি সহ তুচ্ছতাচ্ছিল্যে ক্ষুব্ধ তরুণরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নামে। খুন ও গুম করে পুলিশী হেফাজতে অস্ত্রের মুখে স্বীকারোক্তি আদায়ের ঘটনায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তরুণরা এক দফা দিতে বাধ্য হয়। যার প্রেক্ষিতে মাত্র পয়তাল্লিশ ঘন্টার ব্যবধানে স্বৈরাচারের পতন ঘটে।
শেখ হাসিনা তরুণদের ঠিক বুঝতে পারেনি। এদের পালস সম্পর্কে তার কোন ধারণাই ছিল না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করে। ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী সহ প্রশাসনের অনেকে এখনো তরুণদের অনুভূতি বুঝতে অক্ষম হচ্ছে। ৫ আগস্ট নিছক শুধু সরকার পরিবর্তনের ঘটনা মনে করে অনেকেই সুযোগ সন্ধানী ভুমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। এবং বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তীকালীন কালীন সরকারের কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। তবে তরুণদের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে সব ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে এগিয়ে যাবে বলে অনেকেই মনে করছে।
ইন্টারনেট-বান্ধব তরুণ সমাজের হাতে সারা বিশ্ব এখন অবারিত হয়ে আছে। তারা সবকিছু দেখতে পায়। গুগলের মাধ্যমে যাচাই করে সত্য-মিথ্যা বুঝতে পারে। তাদেরকে আর গোঁজামিল ভাবে কোন কিছু বোঝানো সম্ভব নয়।
বর্তমান রাজনীতিতে সক্রিয় শীর্ষ নেতা কিংবা প্রশাসন সহ সব জায়গার বেশিরভাগ স্থানের শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছেন পঞ্চাশোর্ধরা। এদের অনেকেই এখনো পুরানা ধ্যান ধারনা কিংবা অতীতের পুঁথিগত বিদ্যার মঝে সীমাবদ্ধ রয়েছে। ইন্টারনেট জগত সম্পর্কেও এরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাই তারা বর্তমান তরুণ প্রজন্মের পালস এখনো ঠিক বুঝতে পারছে না।
তরুণরা ইন্টারনেটের কারণে অনেক সচেতন। তারা স্পষ্ট কথা বলতে পছন্দ করেন। তারা সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে ভালবাসে। ইন্টারনেটের কারণে পুরো তরুণ সমাজের চিন্তাভাবনা প্রায় কাছাকাছি স্থানে অবস্থান করছে। তাই তো মিছিলে বোরকার পাশাপাশি পাশ্চাত্য পোশাক সহ বাঙালি সাজের মেয়েরা হাতে হাত ধরে একসাথে প্রতিবাদ করেছে । মাদ্রাসা ছাত্রদের সাথে ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্ররা এক হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পঞ্চাশ বছর আগের রাজনৈতিক বিভাজনের পুরানা ফাঁদে তাদেরকে আর ফেলানো যায়নি। তারা নিজেরা সময়ের প্রয়োজনে এক হয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়েছে।
২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনে মিথ্যা আশ্বাসের মাধ্যমে ধমকের সাথে ভয় দেখিয়ে স্তব্ধ করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। অথচ সেই তরুণরা অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ২০২৪ সালে মাত্র ছত্রিশ দিনে বাংলাদেশ সহ বিশ্বকে চমকে দেয়। কোন শক্তিই তাদের দমাতে পারেনি। অপরাজনৈতিক শক্তি, সন্ত্রাসী, পুলিশ, বিডিআর, আর্মি সহ হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেও নিরস্র তরুণদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তারা এক হয়ে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর কারণে স্বৈরাচার ভয়ে ভারতে পালিয়ে যায়।
তাই তরুণদের “জেনারেশন জি” নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে সবাইকে। বুঝতে হবে তাদের চিন্তাধারা। তাদের পথ চলার সুগম করতে হবে। তাদের নেতৃত্বই সমৃদ্ধ হবে আগামীর বাংলাদেশ।##