“প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস”। ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের ঘটনা নিয়ে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের “শান্তির স্বপ্নে”র স্মৃতিচারণের উপর লেখা বইটিতে তখনকার কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে আসীন হওয়ার প্রস্তাব দিলে নোবেল বিজয়ী তা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
মইন ইউ আহমেদ তার বইতে দাবি করেন, সেদিন সেনাপ্রধানের সাথে টেলিফোনে আলাপ কালে ডক্টর ইউনূস বলেছিলেন, “বাংলাদেশকে তিনি যেমন দেখতে চান সেরকম বাংলাদেশ গড়তে খণ্ডকালীন সময় যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশকে আরো দীর্ঘ সময় ধরে সেবা দিতে তিনি আগ্রহী”।
এছাড়া প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে সাবেক সেনাপ্রধান আরো লিখেছেন,”সেই মুহূর্তে ড. ইউনুসের কথার মর্মার্থ বুঝিনি……..পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি তিনি একটি রাজনৈতিক দল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন যদিও পরিস্থিতির কারণে তাকে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছিল”। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেন নিয়ে এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাবেক এই সেনাপ্রধান ও তার বই নিয়ে আলোচনায় উপরোক্ত বক্তব্য প্রকাশ করেন।
এদিকে ২০১৮ সালের ২৬ শে জুন দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ওয়ান ইলেভেনের সময় ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস সেনাবাহিনীর প্রস্তাবে কেন রাজি হননি, সে বিষয়ে তিনি কথা বলেন। ড. ইউনূস বলেছেন,”ওয়ান ইলেভেন নিয়ে জেনারেল মইন ও ব্রিগেডিয়ার বারীর দুটি সাক্ষাৎকারে “কেয়ারটেকার সরকার দুই বছরের মেয়াদে সীমাবদ্ধ থাকায় আমি দায়িত্ব গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করি” বলে অভিন্ন যে সব কথা বলেছেন তা ছিল একেবারেই কল্পনাপ্রসূত। একেবারে হদ্দ বোকা না হলে একজন অরাজনৈতিক বেসামরিক ব্যক্তি সেনাবাহিনীর নিকট তাঁকে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য একটি সরকারের প্রধানের পদে রাখার এ রকম আবদার করার কথা কখনো চিন্তা করতে পারবে না”।
নোবেল বিজয়ী আরো বলেন, “সেদিন সেনাপ্রধান টেলিফোন আমাকে জানান, দেশকে এই বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে রক্ষা করতে দেশ পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনী একটি নতুন কেয়ারটেকার সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তাঁরা আমাকে এই সরকারের প্রধান করতে চান। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতাগুলো সম্পন্ন করার জন্য তিনি আমাকে প্রস্তুত থাকতে বলেন। আমি তাঁর সদয় প্রস্তাবের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই, তবে একই সঙ্গে এ কথাও বলি যে তাঁরা এ জন্য অন্য কাউকে খুঁজে নিলে ভালো করবেন, কেননা আমি এ প্রস্তাবে সম্মত নই।
সেনাপ্রধান সে সময় তার প্রস্তাবে আমাকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়। পরে জেনারেল মাসুদ, ব্রিগেডিয়ার আমিন সহ পাঁচ-ছয়জন জওয়ান গ্রামীণ ব্যাংক কমপ্লেক্সে আমার বাসভবনে আসেন পুনরায় রাজী করানোর জন্য । তাঁরাও প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আমার মত পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। কিন্তু আমি বিনয়ের সাথে অপারগতা প্রকাশ করি। শেষমেশ তাঁরা এই বলে উঠে পড়েন, ‘আমরা সকালে আবার আসব।
পরদিন শুনতে পাই, আমার বন্ধু ড. ফখরুদ্দীন আহমদ নতুন কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন। তখন আমি স্বস্তি পাই।###