৮৪ বছর বয়সী নাটান মাংসাত কিপগেন বার্ধক্য এসে জীবনের পূর্ণতা অনুভব করতে শুরু করেন। তবে কিছু আক্ষেপ তাকে এখনো পুড়িয়ে মারছে। ইসরায়েলে প্রত্যাবর্তন তার কাছে শুধু মাত্র স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল না। এটি ছিল তার পূর্বপুরুষদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আঁকড়ে থাকা প্রতিশ্রুতির চূড়ান্ত বাস্তবায়ন। কিপগেন হলেন উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি ইহুদি সম্প্রদায় “বেনেই মেনাশে”র সদস্য, যারা প্রাচীন, হারিয়ে যাওয়া মেনাশে উপজাতির বংশধর। ভারত থেকে ইসরায়েলে বসতি গড়ার পর তার মানসিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদক ঐশ্বরিয়া খোসলা এভাবে তুলে ধরে।
বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষার পরও পরিবারের কাউকে ইসরায়েলে অভিবাসন করতে পারেনি বলে আক্ষেপের সুরে কিপগেন বলেন, তার হৃদয়ের একটি অংশ মণিপুরের রয়ে গেছে, যেখানে তার কিছু সন্তান এবং নাতি-নাতনি এখনও অপেক্ষা রয়েছে, তাদের যাত্রা শুধুই বিলম্বিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য নাটান মাংসাত কিপগেনের উপজাতি’বিনেই মেনাশে সম্প্রদায়ের উৎপত্তিস্থল ভারতের মণিপুর এবং মিজোরামের একটি ছোট গোষ্ঠী চিন, কুকি এবং মিজো উপজাতি। এরা ভারত ও মায়ানমার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন তিব্বতি-বার্মিজ জাতিগত গোষ্ঠী। এরা ইহুদিদের একটি সম্প্রদায় ইসরায়েলের হারিয়ে যাওয়া উপজাতি।এই সম্প্রদায়ের প্রায় দশ হাজার সদস্য রয়েছে। ২০০৫ সালের মার্চে ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে বেনি মেনাশেকে ইসরায়েলের বংশধর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে বেনি মেনাশে সদস্যদের ইসরায়েলে অভিবাসনের সুযোগ দিলে কিপগেন ইসরাইলে বসবাসের সুযোগ পায়।
গবেষকরা জানায়, উনিশ শতকের শেষের দিকে ইসরায়েলে ইহুদিদের জন্য একটি আবাসভূমি হিসেবে ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইসরায়েলের বাইরে ইহুদিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করে। রাশিয়ার একটি অঞ্চলকে একসময় সম্ভাব্য ইহুদি আবাসভূমি হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, সেখানে তারা কখনো রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি।তারপরও কিছু প্রস্তাবনায় ইসরায়েলের পাশাপাশি অথবা অন্য কোনও স্থানে দ্বিতীয় ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে বেশ জোরালো ভাবে আলোচনা চলছে এই এলাকায় একটি খ্রিস্টান-ইহুদি ধর্মনির্ভর রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা চলছে, যা পুরনো একটি ‘ডিপস্টেট’ প্রকল্প।’ আরকান সেই রাষ্ট্রের মানচিত্র হতে যাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি অংশের। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্মান্তরকরণ, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অসন্তোষ এবং ক্রামা ধর্মের বিস্তার নিয়েও সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
এদিকে সংঘাতপূর্ণ মায়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে ‘মানবিক করিডোর’ তৈরির আহ্বান জানিয়েছিল মিয়ানমারের ক্যাথলিক গির্জা’র বিশপরা। তাছাড়া জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছে যে মায়ানমারের কায়াহ রাজ্যে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ খাদ্য, পানি এবং ওষুধ থেকে বঞ্চিত হওয়ায়, অনাহার, রোগ এবং ঝুঁকির কারণে ব্যাপকভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে।
অন্যদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের জন্য শর্ত সাপেক্ষে মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে বলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানায়।
তবে রাজনৈতিক দলগুলো এর বিরোধিতা করছে।মানবিক করিডর দেওয়া হলে বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছে অনেকে। এই প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা ও মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামানের জানান “মানবিক করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্তটি কঠিন, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। এটি পরিচালনার পাশাপাশি নিরাপত্তা দিতে হয়। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে বাংলাদেশের স্থল ও আকাশপথে ঝুঁকি আসবে।#####