বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
প্রচ্ছদUncategorizedউদ্বোধন হল ব্রকলিনের"মান্নান হালাল সুপার মার্কেট"।। ক্রেতাদের ভিড়।।মান্নান গ্রুপ আজ অন্যান্য উচ্চতায়।।

উদ্বোধন হল ব্রকলিনের”মান্নান হালাল সুপার মার্কেট”।। ক্রেতাদের ভিড়।।মান্নান গ্রুপ আজ অন্যান্য উচ্চতায়।।

বিশাল সুপার মার্কেটের নান্দনিক মনোরম সাজসজ্জা ছিল চোখে পড়ার মত। মাংস, মাছ ,শাকসবজি সহ গ্রোসারী আইটেমগুলোর দৃশ্যমান উপস্থিত ক্রেতাদের বেশি আকৃষ্ট করছে। সর্বোপরি বাঙালি ক্রেতারা খুশি তাদের পছন্দের নিত্য প্রয়োজনীয় আইটেমগুলি স্তরে স্তরে সাজানো রয়েছে। সুপারশপে ঢুকতেই মনে হচ্ছে ক্রেতাদের মধ্যে উৎসবের জেয়ার বইছে। দুপুর থেকে একরাশ উত্তেজনা নিয়ে সন্ধ্যায় রাগবী রোডের বাসিন্দা আয়েশা আক্তার সুমি সদ্য উদ্বোধন হওয়া কনি আইল্যান্ড এভিনিউর “মান্নান হালাল সুপার মার্কেটে” এসেই তার মনে হল এই সব কথা । সুমির মত শত শত নারী-পুরুষ দুপুর থেকে ভিড় করছে মান্নান হলাল সুপার মার্কেটে। ভেতর অনেকেই ব্যাগ ভরে বাজার করছে। কেউ কেউ শুধু দেখতে এসেছে ঝলমল করা সুপার মার্কেটিকে । তবে ভেতরে ঢুকতেই সুন্দর সব আয়োজনে সবার মনে বয়ে গেলো প্রশান্তি।

উল্লেখ্য গত ২৩মে (শুক্রবার) দুপুরে ব্রকলিনের কনি আইল্যান্ড এভিনিউর “মান্নান হালাল সুপার মার্কেটে”র গ্র্যান্ড ওপেনিং সম্পন্ন হয়। উদ্বোধনের সময় মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা রুহুলা। এই সময় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকবৃন্দ এবং তাদের পরিবারবর্গ ও আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং প্রচুর সংখ্যক ক্রেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আমেরিকার নিউইয়র্কের বাঙালীদের বহুল কাঙিত “মান্নান হালাল সুপার মার্কেট” নামক প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ত্রিশ বছর আগে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে সৈয়দ রহমান মান্নান প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তিন বন্ধু মিলে এই প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে গেলেন অনন্য উচ্চতায়। আজ সেই প্রতিষ্ঠান থেকে চারটি চেইনস্টোর, ফুড ফেয়ার, রেস্টুরেন্ট মিলে ১০টি প্রতিষ্ঠানের বিশাল গ্রুপ পরিণত হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির চেইনস্টোর গুলোর মধ্য রয়েছে “মান্নান হালাল সুপার মার্কেট” জ্যাকসন হাইটস,”মান্নান হালাল সুপার মার্কেট” ওজোন পার্ক,”মান্নান হালাল সুপার মার্কেট”জ্যামাইকা এবং “মান্নান হালাল সুপার মার্কেট”ব্রকলিন শাখা। এছাড়া আব্দুল্লাহ সুপার মার্কেট, ফুড ফেয়ার এবং জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা ও ব্রঙ্কসে মান্নান বেকারির শাখা সমুহ সহ মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে মান্নান গ্রুপ এগিয়ে চলছে। ব্রকলিনের কনি আইল্যান্ড এভিনিউর “মান্নান হালাল সুপার মার্কেটে”র গ্র্যান্ড ওপেনিং এর সময় প্রতিষ্ঠানটির সিইও মোহাম্মদ আকরাম হোসেন এসব কথা বলেন।

উদ্বোধন হওয়া “মান্নান হালাল সুপার মার্কেটে”র আউটলেটটি প্রায় সাড়ে ১০ হাজার স্কয়ারফিট আয়তনের বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে। পাশেই তাদের নিজস্ব আলাদা বিশটি কার পার্কিং রয়েছে। মাছ, মাংস, গ্রোসারি ও ভেজিটেবল সহ বাঙালীদের বিভিন্ন পছন্দের সবকিছু রাখার চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির সিইও জানায়, মান্নান হালাল সুপার মার্কেট প্রতিষ্ঠানটি আমেরিকার শরিয়াহ বোর্ডের একটি পরিষেবা এইচএমএস দ্বারা সার্টিফাইড করা। তাদের মাংস শতভাগ হালাল পদ্ধতিতে জবাই করা হয়। অন্যান্য সুপার সুপারশপের তুলনায় মান্নান হালাল সুপার মার্কেট গুলোর পণ্যের মান ভালো এবং দামও তুলনামূলক কম থাকে বলে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সহ এশিয়া এবং মুসলিম ও আমেরিকারন ক্রেতারা আমাদের সুপারশপ গুলোকে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন।

মান্নান গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা উল্লেখ করে আকরাম সাহেব বলেন, আমরা সব সময় ভালো আমদানিকারকদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ মানের ভালো পণ্য নিয়ে থাকি। তাই ক্রেতারা সবসময় আমাদের উপর আস্থা রাখে।

বেশ কিছু বেকারি পণ্যের উৎপাদন সহ ‘রামিশা ব্রান্ড’, ‘মান্নান ব্রান্ড’, ‘রাজকুমারী ব্রান্ড’ ও ‘আলিশা ব্রান্ডে’র চাল বাজারজাত করার কথা উল্লেখ করে মিস্টার হোসেন বলেন, অপাতত নিউইয়র্কের মধ্যে আমাদের ব্যবসা সীমাবদ্ধ রয়েছে তবে ভবিষ্যতে এর পরিধি বাড়ানো সহ নানান পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

তিন সন্তানের জনক ও বাংলাদেশের শরীয়তপুর থেকে নব্বই দশকে আসা সৈয়দ রহমান মান্নান ওরফে মান্নান সাহেব এই “মান্নান হালাল সুপার মার্কেটের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালে জ্যাকসন হাইটসের ৭৩স্ট্রিটে এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। এর এক থেকে দেড় বছরে পর বরিশালের বাবুল সাহেব ও বিক্রমপুরের স্বপন সাহেব, এই ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়ে পার্টনারশিপের মাধ্যমে মন্নান গ্রুপ গড়ে তোলেন। তাজা হালাল মাংস, হিমায়িত মাছ এবং বিভিন্ন ধরণের মুদি পণ্য বিক্রির মাধ্যমে “মান্নান হালাল সুপার মার্কেট” ব্যাপক পরিচিতি ও সুনাম অর্জন করে। প্রতিষ্ঠাতাদের ত্যাগ ও অকান্ত পরিশ্রমে ‘মান্নান হালাল সুপার মার্কেট’ এখন একটি স্বনামধন্য ব্র্যান্ড হিসেবে নিউইয়র্কে গড়ে ওঠেছে।

তবে ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মান্নান সাহেব এবং ২০২০ সালে ১৫ জুন বাবুল সাহেব অকালে মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে বার্ধক্যে অবস্থান করা স্বপন সাহেব, সবার মুরুব্বী হিসাবে নেতৃত্বে দিয়ে তিন পরিবারারকে এক করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে আকরাম সাহেব বলেন, আমাদের উত্তরসূরী অনেক ত্যাগের বিনিময়ে যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলেছেন আমরা পরবর্তী প্রজন্ম সেই সুনাম ধরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি। তা ছাড়া মান্নান গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ২৫০জন প্রবাসী বাংলাদেশদের কর্মসংস্থান রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বরিশালের ছেলে মোহাম্মদ আকরাম হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন। পরে যমুনা ব্যাংকে এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে সাড়ে পাঁচ বছর কর্মরত থেকে আমেরিকায় পাড়ি জমান। এরপর মন্নান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতার একজন বাবুল সাহেবের মেয়ে মিলা ইসলাম বাঁধনের সাথে বৈবাহিক সম্বন্ধে আবদ্ধ হন। ধীরে ধীরে পারিবারিক ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়ে তিনি এখন মন্নান গ্রুপের অপরিহার্য একজনে পরিণত হয়ে উঠেছেন। এই প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমি পারিবারিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে নিজেকে সিইও হিসাবে নয়, একজন সাধারন কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

টুইন মেয়ে, এক ছেলের সহ তিন সন্তানের জনক জনাব আকরাম খুব ভোর থেকে শুরু হয় তার পথ চলা । এরপর রাত পর্যন্ত চলে তার ছুটে চলা। একদল দক্ষ লোকের সমন্বয়ে টিম ওয়ার্কের মধ্যে সারা দিন তার কার্যক্রম চলে নিয়মের মধ্যে। সংশ্লিষ্ট আউটলেট গুলো পরিচালিত হয় দক্ষ ম্যানেজারদের মাধ্যমে।সেইসাথে রয়েছে নিবেদিত প্রাণ বিশাল কর্মীবাহিনী। সর্বোপরি মুরব্বি স্বপন সাহেবের নেতৃত্বে পারিবারিক সহযোগিতায় নানান কাজে আকরাম হোসেন কখনো ক্লান্তি খুঁজে পান না।

তবে উদ্বোধনকৃত ব্রকলিনের কনি আইল্যান্ড এভিনিউর “মান্নান হালাল সুপার মার্কেটে”র আউট লেটটি শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সব আয়োজনের খুঁটিনাটি সবকিছু নিজের হাতেই গড়ে তুলেছেন জনাব মোহাম্মদ আকরাম হোসেন। আজ উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি সাফল্যের সাথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এখন সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে তিনি মনে করেন। “সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট” বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করা তারই সহধর্মিনী মিলা ইসলাম বাঁধন সংসার আগলে রাখায় তিনি স্ত্রী’র প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।#####

আরও পড়ুন
- Advertisment -spot_img

সর্বশেষ