জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ বিহীন রাজনীতির ময়দানে বিএনপির থাকার কথা ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি সহ অন্তর্বর্তী সরকারের কতিপয় উপদেষ্টার ত্রিমুখী আক্রমণে বিএনপির অবস্থান ক্রমেই দুর্বল হতে থাকে।
জুলাই গণআন্দোলনে প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর দীর্ঘ আন্দোলনে বিএনপির প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামী এখন হয়ে উঠেছে বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে। ক্যাডার ভিত্তিক সংগঠনটি ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির হঠাৎ ছদ্মাবরণে মুখোশ উন্মোচিত করে নিত্য নতুন পরিকল্পনায়, চমক লাগানো বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক চিন্তাশীলদের প্রথম কয়েক মাস বিমোহিত করে রাখে। বিশেষ করে জামাত প্রধানের সময়োপযোগী ও দূরদর্শিত পূর্ণ রাজনৈতিক বক্তব্য, বিভিন্ন স্পর্শকাতর ঘটনা সহ রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে দেশব্যাপী চষে বেড়ানো ঘটনায় রাজনৈতিক হিসাব নিকাশের গতি দ্রুত টালমাটাল হতে থাকে।
অন্যদিকে জুলাই বিপ্লবের নেতৃত্বদানকারী ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করে বিএনপিকে প্রধান প্রতিপক্ষ বানিয়ে প্রতারণা চালাতে থাকে। আকার ইঙ্গিতে বিএনপির কিছু কর্মকাণ্ডকে ফ্যাসিবাদীদের সাথে তুলনা করে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলতে থাকে।
পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের কতিপয় উপদেষ্টারা চলনে বলনে তাদের সরকার পাঁচ বছর পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারে বলে অন্যের মতামত নিজেরা সামনে এনে পুলকিত হতে দেখা গেছে।
জামাত, এনসিপি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কতিপয় উপদেষ্টারা বিভিন্ন ইস্যুৎভিত্তিক ঘটনা নিয়ে গত দশ মাসে বিএনপিকে কোণঠাসা করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে।
সম্প্রতি এনসিপির অর্থ সংক্রান্ত নেতিবাচক কর্মকান্ড, তাদের সম্ভাব্য সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের বিলাসবহুল প্রচারণা, অপরিপক্ক আচরণে করণে জনগনের মাঝে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমতে থাকে।
অন্যদিকে ধুম্রজালের মধ্যে রাখা ‘৭১ এর ভূমিকা নিয়ে জামাতের অবস্থান পরিষ্কার না করা, জাতীয় সংগীতের বিরোধিতা সহ প্রগতিশীল বিভিন্ন চিন্তাধারার সাথে সাংঘর্ষিক অবস্থানে থাকায় জনগণের মাঝে জামাত নিয়ে আবারও বিভিন্ন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া এনসিপি’র সাথে গত দশ মাস ধরে জামাত শিবিরের মধুচন্দ্রিমাও এখন শেষ হওয়ার পথে রয়েছে।
এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার বহির্ভূত জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে গোপন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সুস্পষ্ট অবস্থানের কারণে সরকার এখন তার ক্ষমতার দাপট হারিয়ে ফেলেছে। নানান অভিযোগের পরও জনগণের মাঝে এখনো গ্রহণযোগ্য ব্যাক্তি নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনুস ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা এবং দাপট এখন নখ-দন্তহীন বাঘে পরিণত হয়ে পড়েছে।
তাই সর্ব ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলের মধ্যে হাবুডুবুতে রাখা দেশকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার টেনে নিয়ে যেতে পারবে কিনা তা নিয়ে বিএনপি বারবারই সন্ধিহান হয়ে পড়ছে। সবকিছু জেনেশুনেও অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচন আগামী বছরের জুনের মধ্যে করতে কেন ‘মাইন্ড সেট’ করে বসে আছে তা নিয়ে বিএনপি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কারণ অস্থিতিশীল পরিবেশে অন্য যে কারো ফায়দা লুটার আশঙ্কা দিন দিন প্রবলভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুলত বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সহ দেশ বাঁচাতে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে।
নির্বাচনী রোড ম্যাপ নিয়ে বিএনপির প্রথম থেকে সোচ্চার ছিল। তবে সম্প্রতি তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়। প্রথম দিকে অন্য রাজনৈতিক দল কিছুটা অবাক হলেও এখন সবাই বিএনপি’র দাবির সাথে ঐক্যমত পোষণ করছে। জামাতও পরিস্থিতির বিবেচনা ডিসেম্বর কাছাকাছি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাইছে।
মূলত ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির কঠোর অবস্থানের কারণে রাজনৈতিকদল গুলো ক্রমেই বিএনপি দাবির পক্ষে যৌক্তিকতা খুঁজতে শুরু করেছে।
নির্বাচনের ব্যাপারে এই দৃঢ় অবস্থান বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে আরো শক্তিশালী করে তুলবে বলে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা মনে করছে। নির্বাচনী রোড ম্যাপ আদায় করার মাধ্যমে রাজনৈতিক মাঠে শক্ত অবস্থান বিএনপিকে সংগঠনিক ভাবে আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ করবে। রাজনীতির ময়দানে চালকের আসন থেকেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে। বিজয়ী দল হিসাবে বিএনপি ক্ষমতা এবং দল দুটোকেই সুসংহত করতে সহজ হবে বলে অনেকেই মনে করছে।##