বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
প্রচ্ছদUncategorizedরাগের মাথায় অভিমান করে সপরিবারে দেশান্তরি হওয়া 'শাহ নেওয়াজ' এখন আমেরিকার ১৬টি...

রাগের মাথায় অভিমান করে সপরিবারে দেশান্তরি হওয়া ‘শাহ নেওয়াজ’ এখন আমেরিকার ১৬টি বৃহৎ কোম্পানির মালিক।।

“হঠাৎ আমি রাগের মাথায় প্রচন্ড অভিমান করে গভীর রাতে এক কাপড়ে সপরিবারে আমেরিকার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাই। অথচ বাংলাদেশের তখন আমার সুপার শপ ভালই চলছিল, গার্মেন্টসও ছিল, আমার এমব্রয়ডারি ফ্যাক্টরি ছিল। সবকিছু ফেলে দিয়ে, কাউকে কিছু না বলে মাত্র ৪২ হাজার ডলার নিয়ে আমি আমেরিকা চলে এসি। ১০ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুইন্স প্যালেসে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ২০ (আর২) এর সেকেন্ড ভাইস-গভর্নরের সংবর্ধনা সভায় সম্বর্ধিত শাহ নেওয়াজ তার জীবনের গল্প বলতেগিয়ে এসব কথা বলেন।

নিউইয়র্ক তথা আমেরিকান বাংলাদেশীদের মধ্যে অন্যতম সফল ব্যবসায়ী। বর্তমানে ১৬টি কোম্পানির কর্ণধার। নব নির্বাচিত লায়ন্স ক্লাবের সেকেন্ড ভাইস-গভর্নর শাহ নেওয়াজ বলেন, “জীবনে সাফল্য পেতে হলে প্রথমে পরিশ্রম করতে হবে তারপর সততা থাকতে হবে এবং মুরুব্বীদের দোয়া মানে ভাগ্যও থাকতে হবে। এই তিনটি জিনিস মানুষ একসাথে মেনে চললে সাফল্য অবশ্যই আসবে। সপরিবারে আমেরিকায় এসে আমি তখনও বেকার। বড় বড় আমেরিকান কোম্পানি গুলের কাছে ইনস্যুরেন্সের এজেন্সি নেওয়ার জন্য গেল হোয়াইট কালারের লোকজন বলতো,” তুমি ইন্ডিয়ান পিপলস, এই ইনস্যুরেন্সের ব্যবসা তোমার জন্য নয়, ডোন্ট ডু ট্রাই ইট। তবে তুমি সুন্দর একটা ইন্সুরেন্সের নাম পেয়েছ।নিউইয়র্ক ইনস্যুরেন্স কোম্পানি। এটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকো। এই সব বিজনেস ইন্ডিয়ানদের জন্য নয়, এটা হলো আমেরিকানদের বিজনেস।” কথাগুলো শুনে শাহ নেওয়াজের ভিতর প্রচন্ড রকম জিদ চেপেছিল। কিন্তু বাইরের শান্ত ও স্বাভাবিক। মূলত রাগ, জিদ এবং অভিমানের কারণে জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত গুলো নিতে পেরেছিল শাহ নেওয়াজ।

ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের শুরুতে সম্বর্ধিত মানবিক মানুষ শাহ নেওয়াজ এর সংগ্রামী জীবনী নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। এরপর স্টেজে আমন্ত্রিত হয়ে বিশাল হল ভর্তি অতিথিদের কাছে নিজের জীবনের সাফল্যে ও সংগ্রামের  বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশ-আমেরিকান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজ বক্তব্যের শুরুতে নস্টালজিয়ার মধ্যে চলে যান তার শৈশবে। তিনি গর্বের সাথে জানান, আমি খুলনার ছেলে। শহরের সোনাডাঙ্গায় আমার বাবার বাড়ি। খুলনার সেন্ট যোসেফ স্কুল থেকে মেট্রিক ও খুলনা বিএল কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। প্রথমে ইকোনমিক্স থেকে অনার্স-মাস্টার্স পরে আইবিএ থেকে এমবিএ পাশ করি।

এছাড়া তরুণ শাহ নেওয়াজ তার প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন ঢাকাস্থ চেকস্লোভাকিয়া এম্বেসির কমার্শিয়াল এটাসি হিসাবে। পরে কয়েক হাজার মেধাবী প্রতিযোগীর সাথে পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে স্বনামধন্য কর্পোরেট হাউস বাংলাদেশ টোব্যাকোতে যোগ দেন। বর্তমানে যেটি ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ নামে পরিচিত। প্রথম পোস্টিং হয় চট্টগ্রামে। সেখানে পারিবারিক পছন্দে বিয়ে হয় রানু নেওয়াজের সাথে। স্বামী স্ত্রীর সেই ভালবাসা আজও বহমান তাই তারা এখন সুখী ও সফল দম্পতি। বক্তব্যের এই সময় তিনি তার স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এরপর তিনি ব্যবসায় যোগ দিয়ে ২০০০ সালে গড়ে তোলেন শাহ নেওয়াজ গ্রুপ। সেই গ্রুপে একে একে সংযুক্ত হতে থাকে সুপার শপ, গার্মেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

হঠাৎ প্রচন্ড অভিমানি শাহ নেওয়াজ এক কাপড়ে পরিবার নিয়ে পাড়ি জামান সুদূর আমেরিকায়।শুরু হয় প্রবাস জীবনে তার টিকে থাকার নতুন যুদ্ধ। স্বল্প সময়ে গড়ে তোলেন টিডিএস ব্রোকারেজ নামক প্রতিষ্ঠান। এরপর গড়ে তোলেন নিউইয়র্ক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। ইন্স্যুরেন্স সংক্রান্ত নিউইয়র্কের বড় বড় কোম্পানির এজেন্সি নিতে তাকে পার করতে হয় অনেক কঠিন সময়। মেধা, পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের কারণে শাহ নোয়াজ কখনো হার মানতে রাজি ছিলেন না। সততা, নিষ্ঠা ও ভাগ্যের সহায়তা তিনি একে একে সব কিছু অর্জন করেন। ধীরে ধীরে তিনি আমেরিকায় গড়ে তোলেন ১৫/১৬ টি কোম্পানি। আজ তিনি শুধু অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জন করেননি।একজন সামাজিক ও মানবিক মানুষ হিসেবে আমেরিকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজের সম্মানিত অবস্থান। তিনি আমেরিকায় বাংলাদেশী কমিউনিটি ও প্রবাসী বাঙালীদের জন্য একজন ত্রাতা হিসেবে সব সময়ে আবির্ভূত হয়ে থাকেন। এই কীর্তিমানের স্ত্রীর রানু নেওয়াজও স্বামীর সফলতা সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। পাশাপাশি সবার সাথে সুখ-দুঃখ একসাথে ভাগাভাগি করে এগিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বক্তব্যের পালা শেষে শাহ নেওয়াজ এবং তার স্ত্রীর রানু নেওয়াজকে ফুল দিয়ে বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষে সংবর্ধনা জানানো হয়। সংবর্ধনা জানানো উল্লেখ যোগ্যেদের মধ্য ছিল, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ড, নিউইয়র্কে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন, জামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ড সোসাইটি, অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী জামাইকা বাংলাদেশ এসোসিয়েশন, নিউইয়র্ক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, গোল্ডেন এইজ হোম কেয়ার, সাপ্তাহিক আজকাল পত্রিকা সহ শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। পরে আপ্যায়ন ও সংগীত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।#####

আরও পড়ুন
- Advertisment -spot_img

সর্বশেষ