ভূরাজনীতির কারণে মার্কিন ডলার দুর্বল হওয়ার কথা থাকলেও উল্টো দুই শতাংশ বৃদ্ধিতে অনেকেই অবাক হয়েছে। সমালোচকরা এই বৃদ্ধির সাথে কারিগরি বিষয় জড়িত বললেও, অর্থনৈতিবিদের অভিমত বিনিয়োগকারীরা এখনো ডলারের উপর আস্থা রেখেছেন।
কয়েক দশক ধরে মার্কিন ডলার প্রভাবশালী বৈশ্বিক মুদ্রা হিসাবে সর্বোচ্চ রাজত্ব করেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে রাশিয়ায় ডলারের কার্যক্রম হ্রাস পায়। আন্তর্জাতিক বাজারে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর রাশিয়া চীনের সাথে লেনদেন বাড়িয়ে দেয়। রাশিয়া চীনা মুদ্রা “ইউয়ানে” কয়লা এবং গ্যাসের জন্য অর্থপ্রদান শুরু করে এবং মস্কো তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইউয়ান হোল্ডিং বৃদ্ধি করে । ব্লুমবার্গের মতে, ইউয়ান এখন রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করা বৈদেশিক মুদ্রা ।
অন্যান্য দেশ রাশিয়ার ইউয়ানের ক্রমবর্ধমান কার্যক্রম লক্ষ্য করেছে এবং ডলারের উপর তাদের নিজস্ব নির্ভরতা হ্রাস করার সুযোগ খুঁজছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি থেকে কেনা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য ফ্রান্স ইউয়ানে অর্থপ্রদান গ্রহণ করছে ৷ ইরাক চীন থেকে আমদানির জন্য ইউয়ানে অর্থ প্রদান করতে চায় এবং এমনকি ব্রিটিশ খুচরা বিক্রেতা টেসকো তার চীনা আমদানিকৃত পণ্যের জন্য ইউয়ানে অর্থ প্রদান করতে চায় । তাই সারাবিশ্বে সম্মিলিত লেনদেনে ডলারের পরিমাণ এখন তুলনামূলকভাবে কমছে ।
অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা চলতি বছর ঐক্যমত পোষন করেছি যে, মার্কিন ডলার দুর্বল হবেই। কিন্তু গত দুই মাস ধরে ডলারের মূল্য ২ শতাংশ বৃদ্ধির ঘটনা অনেকেই অবাক করে দিয়েছে বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। ছয়টি মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন মুদ্রা ডলারের সূচক নির্ধারণ করা হলেও এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত ডলারের সূচক ২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১০৩। যদিও তা এখনও গত বছর সেপ্টেম্বরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম
যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী মাসে সুদের হার বৃদ্ধি স্থগিত করলে ডলার দুর্বল হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে উল্টোটা ঘটছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডলারের শক্তিশালী হওয়ার নেপথ্যে তথাকথিত কারিগরি বিষয় জড়িত। বিসিএ রিসার্চের এফএক্স স্ট্র্যাটেজিস্ট চেস্টার এনটনিফোর বলেছেন, ডলার খুব বেশি বিক্রি হয়। এটি একটি কারিগরি সূচক। কিন্তু একটি সাধারণ কারিগরি সূচক হলোও ডলারে একটি সরল রেখার পতন খুবই স্বাভাবিক।
অজ্ঞাত আশঙ্কায় নিরাপদ মনে করার কারণে ডলার সম্প্রতি শক্তিশালী হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি এবং মার্কিন ঋণসীমার বিরোধে শংন্কার কথা বলছেন, কমার্জব্যাংকের মুদ্রা কৌশলবিদ এস্টার রেইশেল্ট।
বৈশ্বিক অর্থনীতির উদ্বেগজনক প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিতের কারণেও অনেক বিনিয়োগকারী এখনো ডলার কিনতে নিরাপদ মনে করে করছে।
ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা যুক্তরাষ্ট্রের ঋণগ্রহণের সীমা ৩১.৪ ট্রিলিয়ন পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য সমঝোতার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। অনেক ব্যাংক দুর্বল হওয়ার কারণে মার্কিন অর্থনীতির বিপর্যকর খেলাপি হওয়ার হুমকিও বাড়ছে।
বাজারে যখন এমন ধরনের উদ্বেগ বিদ্যমান থাকে তখন বিনিয়োগকারীরা কম ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ, যেমন- বন্ড, স্বর্ণ ও ডলার ক্রয় করেন।
তাছাড়া চলতি সপ্তাহে চীনের অর্থনীতি এপ্রিল মাসে প্রত্যাশাজনক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি বলে পরিসংখ্যানে প্রকাশিত হয়ছে।
তাই মার্কিন ডলার উত্থান এবং পতনের বিষয়টি স্বাভাবিক সরলরেখার চিন্তা করলে হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।##