শনিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদআন্তর্জাতিকবিশ্বব্যাপী সংঘাতে গত বছর ২ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে

বিশ্বব্যাপী সংঘাতে গত বছর ২ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে

গত বছর বিশ্বব্যাপী সংঘাত, ৯৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এতে ২ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা গেছে। এইসব ঘটনায় বৈশ্বিক শান্তি সূচক টানা নবম বারের মত অবনতির পাশাপাশি সংঘাতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে ১৭.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বিশ্বব্যাপী জিডিপির ১৩ শতাংশ। সিডনি ভিত্তিক ইন্সটিটিউট ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড পিস এর বার্ষিক গ্লোবাল পিস ইনডেক্সের এক সমীক্ষায় এইসব তথ্য প্রকাশ করছে বলে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে। এই সংগঠনটি ২০০৯ সাল থেকে বিশ্ব শান্তি সূচক নিয়ে কাজ করছে।

গ্লোবাল পিস ইনডেক্স চার্টে, ১৬৩টি দেশের মধ্যে ইথিওপিয়া এবং ইউক্রেনে মারাত্মক যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার মাধ্যমে বিশ্ব সহিংসতা নতুন যুগে প্রবেশের ইঙ্গিত দিয়েছে৷

সমীক্ষায় অনুমান করা হয়েছে যে, শুধুমাত্র রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের ফলে ২০২২সালে ৮২ হাজার মারা যায়। তবে, এর চেয়েও বেশি মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইথিওপিয়ায়। যেখানে টাইগ্রেতে জাতীয় সরকার এবং আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে সংঘর্ষে ১লাখ ৪ হাজারেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছ। ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডা গণহত্যার পর এক বছরের সংঘাতে ইথিওপিয়ায় সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু ঘটেছে বলে পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মালি এবং মায়ানমার সহ অনেক দেশে সংঘাত-সম্পর্কিত প্রাণহানির আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েই চলেছে।

তবে এটা স্বীকার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, যেকোন সংঘাতে মৃতের সংখ্যা গণনা করা বেশ চ্যালেঞ্জিং এবং যুদ্ধ এবং সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে সংঘাতের তথ্য সংগ্রহ করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাজ্য-ভিত্তিক সহিংসতার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর ৮৪টি দেশে সংঘাতের উন্নতি রেকর্ড করা হলেও, অপর ৭৯টি দেশে শান্তির অবনতি ঘটনাও ঘটেছে । ৫৯টি দেশ ছিল যেখানে গত এক বছরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অবনতি ঘটেছে।

সমীক্ষায় সংঘাত ময় বিশ্বে আশার কিছু ঝলক দেখা গিয়েছে । কিছু দেশ যেমন লিবিয়া এবং এমনকি আফগানিস্তান, শান্তির দিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে সূচকে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইসল্যান্ড সূচকের সূচনার পর থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসাবে তার অবস্থান বজায় রেখেছে। এছাড়া নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রিয়ার মতো অন্যান্য দেশগুলিও শান্তিতে উচ্চ অবস্থানে রয়েছে।

ইউক্রেনের যুদ্ধ শান্তির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। ইউক্রেন সবচেয়ে বেশি অবনতির সম্মুখীন হয়েছে, সহিংসতায় দেশির অর্থনৈতিক প্রভাব ছিল মারাত্মক। সংঘাতের অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে ৪৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ইউক্রেনের জিডিপির ৬৪শতাংশ।

ইউক্রেনের সংঘাত সত্ত্বেও, ইউরোপ এখনো সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে অবস্থান করছে। অথচ মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা সর্বোচ্চ মাত্রার সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছে।

সহিংসতার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাব ১৭শতাংশ বেড়েছে। ২০২২ সালে এর প্রভাব ১৭.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বিশ্বব্যাপী জিডিপির ১৩ শতাংশ।

ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে তুলেছে। আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকির মধ্যে রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী সংঘাতের মৃত্যু আরও বাড়তে পারে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী, যেমন সুদানের গৃহযুদ্ধ, যা ইতিমধ্যেই আনুমানিক ৩ হাজার প্রাণ কেড়ে নেয়ার পাশাপশি অনিশ্চিত পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিশ্ব এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে এই সংঘাতময় দ্বন্দ্বগুলোর অন্তর্নিহিত কারণগুলিকে মোকাবেলা করার জন্য এবং মানবতাকে আরও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা খুবই প্রয়োজন৷####

 

আরও পড়ুন
- Advertisment -spot_img

সর্বশেষ