প্রায় সময় সংখ্যক ভোট পাওয়ার পরও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির তার চির প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ থেকে তিনগুনেরও বেশি আসনে জয় লাভ করে। মূলত নির্বাচন পরিচালনায় কৌশলী নেতৃত্বের কারণে তরুণ তারেক রহমান সেদিন রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন।
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মোট ভোট পেয়েছিল ২ কোটি ২৮ আট লাখ আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২ কোটি ২৩ লাখ ভোট। মোট ভোটের ৪০.৯৮ শতাংশ পেয়েছিল বিএনপি আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৪০.১৩ শতাংশ। দুই দলের মধ্যে মোট ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র পাঁচ লাখ। যা শতকরা হিসেবে দশমিক ৮৪ শতাংশ। অথচ আওয়ামী লীগ আসন পেয়েছিল ৬২টি আর বিএনপি পেয়েছিল ১৯৩টি আসন। প্রায় সমান সংখ্যক ভোট পাওয়ার পরও বিএনপি, আওয়ামী লীগ থেকে তিন গুনেরও বেশি আসনে জয়লাভ করেছিল।
মূলত তারেক রহমানের নেতৃত্বে একদল বিশ্বস্ত নিবেদিত প্রাণ তরুণ ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঠিক তার দুই বছর আগ থেকেই, দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবন থেকেই নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করে। সংসদের ৩শ আসনের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ, সম্ভাব্য বিএনপির প্রার্থীদের এলাকায় অবস্থান, গ্রহণযোগ্যতা, নিষ্ক্রিয়তা সহ ভালো খারাপ সবকিছুই সরজমিনে গিয়ে মাঠের প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করত।এবং সারা বছর এই প্রক্রিয়া চলমান ছিল।
প্রতিটি সংসদীয় এলাকার তৃণমূলের বিএনপি সহ তার অঙ্গ সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্য হাওয়া ভবনে নিয়মিত বৈঠক সহ নেতাকর্মীদের নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হতো। পাশাপাশি জনগণের ভাবনা, দলীয় কার্যক্রম, সম্ভাব্য প্রার্থীরা অবস্থানসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে মাসিক প্রতিবেদন বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হতো। সেই প্রতিবেদনগুলো আমলে নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটি নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দিত। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হতো কি-না তা হওয়া ভবন কেন্দ্রিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নিয়মিত মনিটর করতে।
মূলত হাওয়া ভবন কেন্দ্রিক গবেষণায়, নির্বাচনী মাঠের প্রকৃত অবস্থান, দলীয় কোন্দল নিরসন, সঠিক প্রার্থীদের মনোনয়নের দিকনির্দেশনা, সর্বোপরি প্রতিটি আসনের জন্য আলাদা আলাদা নির্বাচনী কৌশলের চিত্র বিএনপির সর্বোচ্চ নির্বাচনী বোর্ডের কাছে পাঠানো হত। হাওয়া ভবন থেকে সরবরাহাকৃত সুনির্দিষ্ট তথ্যের কারণে দলের যোগ্য প্রার্থীরা সহজে নির্বাচনে জয়ী হতে সক্ষম হয়।
স্থান কালের বিবেচনায় দল এবং জোটের প্রার্থীদের জন্য আসন বন্টনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিত। বিএনপির সর্বোচ্চ নির্বাচনী বোর্ড তা আমলে নিতেন। এতে দল এবং জোটের আসন বৃদ্ধির পায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে ১৯৩ টি আসন সহ চার দলীয় জোট হিসেবে মোট ২১৬টি আসনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করে।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান বগুড়া জেলা কমিটির সদস্য হিসেবে বিএনপিতে যোগদানের মাধ্যমে প্রথম রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণা অংশ নেওয়ার পর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হাওয়া ভবন থেকে তিনি নির্বাচনের কৌশলগত সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পালনে অভূতপূর্ব সাফল্যর কারণে ২০০২ সালে দলের স্থায়ী কমিটি জনাব তারেক রহমানকে বিএনপি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব প্রদান করেন।###
লেখক – মাহবুব রশীদ, সাবেক বুরো প্রধান, দৈনিক দিনকাল, চট্টগ্রাম অফিস।