জুলাই-আগস্টের গণবিপ্লবে সাবেক পতিত সরকার শীর্ষস্থানীয় সবাই বিদায় নিলেও ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তিনি এখনো সপদে বহাল তবিয়তে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র পাওয়া না পাওয়া নিয়ে বিতর্কে রাষ্ট্রপতি এখন প্রচন্ড ঝড়ের মুখে। গত দুদিন ধরে সারা দেশে ক্রমাগত বিক্ষোভ পরিস্থিতির কারণে মনে করা হচ্ছে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বিদায়ের সময় দ্রুত ঘনিয়ে এসেছে।
২০২৩ সালে তৎকালীন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রাক্কালে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন, তা নিয়ে সে সময় নানা জল্পনা কল্পনা চলছিল৷
তখন রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে ছিলেন দলীয় সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সহ আওয়ামী সমর্থিত সাবেক হেভিওয়েট আমলা ও শিক্ষাবিদরা। আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির সভায় রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ভার দেওয়া হয় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ওপর৷
সবাইকে অবাক করে দিয়ে দলীয় প্রধান রাষ্ট্রপতি পদে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে বেছে নেয়।অথচ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নাম রাষ্ট্রপতি হিসেবে কোন পর্যায়ে আলোচিত হয়নি।
তখন এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক জল্পনা চলে। আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের অনেকেই মন্তব্য করতে দেখা যায় “আন্দোলন সংগ্রাম সহ দলের দুর্দিনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন না দেয়ায় যদি দল কখনো বিপদে পড়ে, এরা তখন মেরুদন্ড নিয়ে দাঁড়াতে পারবে না”। অথচ এর আগের দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জিল্লুর রহমান এবং আবদুল হামিদকে।
যার প্রেক্ষিতে তখন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক দুদক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের দ্বাদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যদিকে ২০০২ সালে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ বিএনপির সমর্থনে দেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়। অথচ এর আট মাস আগে ২০০১ সালে বিএনপি সাবেক পররাষ্ট্র ও উপ-প্রধানমন্ত্রী এ কিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দলীয় আস্থা হারানোর কারণে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বদরুদ্দোজা চৌধুরী পদত্যাগ করায় ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর নির্বাচনকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি তথা আলোচিত “ওয়ান ইলেভেন” এর দিন দুপুরে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ এবং নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী সহ একদল সেনা কর্মকর্তার চাপে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। অথচ এই পুরো প্রক্রিয়ায় দলীয় সমর্থন পুষ্ট রাষ্ট্রপতি বিএনপিকে রেখেছিল অন্ধকারে ।
পরদিন প্রধান উপদেষ্টার পদে স্থলাভিষিক্ত হন ফখরুদ্দীন আহমদ। তখনকার সরকারকে বলা হতো ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন সরকার। বিএনপির রাজনীতিকে স্তব্ধ করতেই ওয়ান-ইলেভেনের সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ওয়ান ইলেভেনের কারণে গত ১৫ বছর দেশে ফ্যাসিবাদের উত্থানের ঘটছে।
মূলত ইয়াজউদ্দিন আহমেদের আদর্শের মেরুদণ্ডহীনতার কারণে ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তাই বিএনপি’র মনোনীত রাষ্ট্রপতি দুঃসময়ে বিএনপি’র বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছিল। তেমনি আজ রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পু ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় তারও বিদায়ের সময় দ্রুত ঘনিয়ে আসেছে।##