আগামী পাঁচ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বিরাজ করছে। চার বছর মেয়াদের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের নির্বাচনকে ঘিরে যুদ্ধরত দেশ, বিভিন্ন পরাশক্তি সহ পুরো বিশ্বের দৃষ্টি এখন ট্রাম্প ও কামালার মধ্যে নিবদ্ধ হয়ে রয়েছে। আগামী বিশ্ব কেমন হবে তা এই নির্বাচনে বিজয়ীর উপর অনেকখানি নির্ভর করছে বলেই মানুষের এত উৎকণ্ঠা। ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনী ফলাফলকে ঘিরে উত্তেজনায় সেই সময় পুরো বিশ্ব কয়েকদিন থমকে ছিল।
সম্প্রতি ‘গার্বেজ’ তথা আবর্জনা শব্দটি নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কামালা হ্যারিসের প্রচারণায় আরও এক দফা উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এক সমাবেশে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ট্রাম্পের সমর্থকদের ‘গার্বেজ’ (আবর্জনা) মন্তব্যে করেন। ট্রাম্পও সুযোগটি কাজে লাগিয়ে উইসকনসিনে এক অনুষ্ঠানে তিনি একটি আবর্জনার ট্রাকের সামনে ছবি তোলেন। বাইডেন ও হ্যারিসের প্রতি ইঙ্গিত করে ট্রাম্প বলেন, এই ট্রাকটি তাদের সম্মানে। যে দেশের জনগণকে ঘৃণা করে, সে দেশ চালানোর যোগ্য নয়। তবে বাইডেনের মন্তব্যকে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ বলে দাবি করে কামালা হ্যারিস বলেন, আমি এই মন্তব্যকে সমর্থন করি না।
অভিবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে বাংলাদেশী মানুষের মধ্যে আমেরিকান নির্বাচন নিয়ে সব সময় ব্যাপক আগ্রহ থাকে। তার উপর গত বৃহস্পতিবার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট নিয়ে মার্কিন নির্বাচনী উত্তাপ এখন বাংলাদেশের ছড়িয়েছে।
ট্রাম্প টুইটটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব দীপাবলি’র শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর ‘বর্বর’ সহিংসতা চালানো হচ্ছে এবং তারা হামলা ও লুটপাটের শিকার হচ্ছেন।এসবের নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ ‘বিশৃঙ্খল’ অবস্থার মাঝে রয়েছে বলে তিনি টুইটে উল্লেখ করেন।
গত পাঁচই অগাস্ট বাংলাদেশ সংগঠিত গনঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যায়। আওয়ামী সরকারের পতনের পর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বর্তমানে দেশ পরিচালনা করলেও প্রতি বিপ্লবীরা এখনো বেশ সক্রিয়। প্রতি বিপ্লবীরা মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাংলাদেশ নিয়ে এই মন্তব্যে দেশের রাজনৈতিক ময়দানে এখন ব্যাপক উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ‘সরকার ও রাজনীতি’র অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ ট্রাম্পের মন্তব্য প্রসঙ্গে বিবিসিকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারতীয় গণমাধ্যম ‘ছোট ঘটনাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে বলে আসছে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্য ট্রাম্পের এই টুইট।
অন্যদিকে বাংলাদেশ-ভারত নিয়ে গবেষণারত ও দিল্লির ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত স্বীকারোক্তি দিয়ে বিবিসিকে বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের এই ঘটনাগুলো অতিরঞ্জিতভাবে প্রচার হয়েছে। তবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা যে ঘটেছিল সেটিও মনে করিয়ে দেন তিনি।
শ্রীরাধা দত্ত আরো বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার সম্পর্ক সবসময়ই ভালো। সেই সঙ্গে রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সবসময়ই খুব ভালো থাকে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দীবাবলি’র শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এর মানে হিন্দু ভোটারদের ভোট পেতেই এটা করেছেন তিনি। কিন্তু আমেরিকাতে তো বিশাল সংখ্যক আওয়ামী লীগ সমর্থকও রয়েছেন। তারাও ট্রাম্পের এই স্টেটমেন্ট পছন্দ করবেন। কারণ আওয়ামী লীগ সবসময় মনে করে, তারা হিন্দুদের পক্ষে।
মূলত আগামী ৫ই নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে মার্কিন নির্বাচনী উত্তাপ বহমান থাকবে বলে অনেকেই মনে করছে।###